পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সেকালের কথা

 যাহা কেহ দেখে নাই, তাহা কেমন ছিল, তাহা কি বলা যায়?

 অনেক সময় যায় বইকি? তোমরা সেই ফকির আর হারানো উটের গল্প শুন নাই? ফকির উটটাকে না দেখিয়াই বলিয়াছিলেন যে, সেটা পলাতক, কানা এবং খোঁড়া; সেটার একটা দাঁত নাই, আর পিঠে চিনি এবং মধুর বোঝা।

 স্কুলে বেত খাইলে, বাড়িতে আসিয়া তাহা বলিবার জন্য কেহ ব্যস্ত হয় না। কিন্তু বাড়ির লোকে পিঠে দাগ দেখিয়া অনেক সময়ই তাহা বুঝিয়া ফেলে। অথচ বেত খাইবার সময় সচরাচর বাড়ির লোক স্থলে উপস্থিত থাকে না। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, ঘটনার সময় সেখানে না থাকিলেও তাহার কথা জানা একেবারে অসম্ভব নহে, কারণ তাহার চিহ্ন বর্তমান থাকিতে পারে।

 পৃথিবীতে এইরূপ অনেক ঘটনার চিহ্ন রহিয়াছে। যে সকল ঘটনা ঘটিতে আমরা কেহ দেখি নাই, কিন্তু তাহার চিহ্ন দেখিয়া তাহার সম্বন্ধে অনেক কথা জানিতে পারি। এই রূপে পৃথিবী এবং জীব জন্তুর প্রাচীনকালের অবস্থা সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য কথা জানা গিয়াছে।

 আমরা হয়ত মনে করি যে, এই পৃথিবীকে এখন আমরা যেরূপ দেখিতেছি সে চিরকালই এইরূপ ছিল। কিন্তু পৃথিবীতে অতীত কালের যে সকল ঘটনার চিহ্ন রহিয়াছে, তাহার কথা ভাবিয়া দেখিলে আর এ ভ্রম থাকে না। এই মনুষ্য জাতিটারই যে কতরূপ অবস্থার পরিবর্তন হইয়াছে, তাহা ভাবিলে আশ্চর্য হইতে হয়।

 পৃথিবীর স্থানে স্থানে প্রাচীনকালের নানা জাতীয় মনুষ্যের চিহ্ন অদ্যপি দেখা যায়। সে সকল লোক আর এখন নাই, কিন্তু এই চিহ্নগুলির ভিতরে তাহারা তাহাদের পরিচয় রাখিয়া গিয়াছে। পর্বতের গুহায় প্রাচীনকালের মানুষের হাড় আর তাহাদের ব্যবহারের নানারকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এইসকল জিনিস দেখিলে স্পষ্টই বোধ হয় যে, আজকাল মানুষের অবস্থা যতই ভাল হউক না কেন, অতি প্রাচীনকালে তাহার নিতান্ত হীন অবস্থা ছিল। আমি লেখাপড়া বা টাকাকড়ির কথা বলিতেছি না। যখন মানুষের ঘর-বাড়ি ছিল না, বাসনপত্র প্রস্তুত করিবার ক্ষমতা ছিল না, পাথরের কুচি, জন্তুর হাড় বা গাছের কাঁটা ভিন্ন অস্ত্র ছিল না, তখন তাহার অবস্থা কিরূপ ছিল একবার ভাবিয়া দেখ।

 এই সকল মানুষের বুদ্ধি কতখানি ছিল, তাহদের মাথার হাড় পরীক্ষা করিয়া এখনকার পণ্ডিতেরা তাহা স্থির করিয়াছেন। সে বুদ্ধি অনেক স্থলে একটা বানরের বুদ্ধির চাইতে বেশি ছিল বলিয়া বোধ হয় না। কয়েক বৎসর পূর্বে খবরের কাগজে দেখিয়াছিলাম যে, কথা কহিতে জানিত না—সে শক্তিটাই তাহার ছিল না—এমন মানুষের হাড়ও নাকি পাওয়া গিয়াছে। বানরেরও ভাষা আছে, এ কথা আজকালকার কোন কোন পণ্ডিত বলেন;এমনকি, তাঁহারা সেই ভাষা শিক্ষার জন্য চেষ্টাও করিতেছেন। এ কথা যদি সত্য হয়, তবে বলিতে হইবে যে, ঐ ভাষাহীন মানুষটার বুদ্ধি বানরের বুদ্ধির চাইতেও কম ছিল।

 মানুষ তো সেদিনকার জন্তু। পৃথিবীর বয়সের তুলনায় মনুষ্য জাতির বয়স অতি সামান্যই বলিতে হইবে। এখন মানুষ মনে করে যে, সে পৃথিবীর রাজা, কিন্তু দুদিন আগে এই