পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সেকালের কথা
৮০৫

সেকালের কথা bアのa সাজানো থাকে, ঐসকল পাতের মাঝখানে লোহার ছেনি ঢুকাইয়া তাহাতে হাতুড়ির ঘা মারিলে পাথরখানা আপনা হইতেই চিরিয়া দুভাগ হইয়া যায়। এইরূপ করিয়া প্রকাণ্ড পাথর হইতে পাতলা তক্তা বাহির করিতে হয়। তক্তাগুলি অনেক সময় এমনি পবিষ্কার বাহির হয় যে, তাহা দেখিলে বিশ্বাস করিবে না যে ওগুলি এক একখানা করিয়া হাতে প্রস্তুত করা হয় নাই। আমি অনেকবার দাড়াইয়া ঐরাপ পাথব চেরা দেখিয়াছি। আর সেই সমযে মাঝে মাঝে আর যে একটা ব্যাপার দেখিয়াছি, তাহা অতি আশ্চর্য। নদীব চড়ায় বালিতে যেমন ঢেউয়ের দাগ থাকে, অনেক সময় ঐসকল পাথরের গায়ে অবিকল সেইকাপ দাগ দেখিতে পাওযা যায়। তোমার সাধ্য নাই যে উহাকে ঢেউয়ের দাগ ভিন্ন আর কিছু বল। কথাটা যতই আশ্চর্য বোধ হউক না কেন, উহা যে ঢেউয়ের দাগ, তাহাতে আব কোন সন্দেহ নাই। নদীর তলায় নানা রকমের পোকা চলাফেবা করে, নরম মাটিতে তাহার দাগ পড়ে। বেলে পাথরে অনেক সমঘ সেই দাগগুলি পর্যন্ত অবিকল দেখিতে পাওয়া যায়। চুনারের পাথবে আমি অনেক খুজিযাও ঐরাপ দাগ দেখিতে পাই নাই বটে, কিন্তু ঐকাপ দাগওয়ালা পাথর অন্য স্থান হইতে কলিকাতার জাদুঘরে আনিয়া বাখা হইয়াছে। যাহাঁদের সুবিধা আছে, ইচ্ছা করিলেই গিয়া দেখিয়া আসিতে পাব। উড়িষ্যার অন্তর্গত তালচিরের পাহাডে এইরূপ পাথর পাওযা যায়। বেলে পাথর আব নদীর তলার বালিতে প্রভেদ খালি এই যে, একটা এখনো কোমল রহিয়াছে, আর একটা কোন কারণে জমাট বাধিয়া পাথর হইয়া গিয়াছে। জিনিস একই। লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বে ঐ বেলে পাথর হয়ত কোন নদী অথবা হ্রদের তলায় ছিল। আজ তাহার কাছে দাড়াইয়া যেন সেই লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বের পৃথিবীকে হঠাৎ সামনে দেখিতে পাইতেছি। তখনকার পৃথিবী কিরূপ ছিল? তখনো কি আমাদের আজকালকার গাছপালার মতন গাছপালা হইত? মানুষ তখন ছিল কি? কি আশ্চর্য! দেখ বড়-বড় রাজারা মৃত্যুর পরে তাহদের চিহ্ন রাখিয়া যাইবার জন্য কত ব্যস্ত হন, কিন্তু কালে সেইসকল চিহ্নের কিছুই থাকে না। পাথরের গোরস্থান বল, কীর্তিস্তম্ভ বল, এ সকল আর ক-হাজার বৎসর থাকে? কিন্তু এই যে লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বেকার পোকা—মনুষ্য জাতির জন্মের কত যুগ পূর্বে কোনখান দিয়া সে চলাফেরা করিয়াছিল, তাহার পায়ের দাগ আজও পাথরে খোদা রহিয়াছে। পৃথিবীর পুরাতন ইতিহাস আলোচনা করিলে আমাদের অহঙ্কার একটু কমে। দুদিন আগে আমরা কোথায় ছিলাম, দুদিন পরে হয়ত বা কোথায় থাকিব! এরপর আবার কোনদিন হয়ত আমাদের চাইতে ঢের বুদ্ধিমান কোন জন্তু পৃথিবীতে আসিবে। তাহারা পাথর খুঁড়িয়া আমাদের হাড় বাহির করিয়া তাহার সম্বন্ধে যাহা বলিবে, তাহা আমাদের পক্ষে সুখ্যাতির মাছের মতন চেহাবাওযালা অতি ভযস্কব সেকালেব কুমিব। প্রায় ৪০ ফুট লম্বা হইত