পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সেকালের কথা
৮১৯

বলিতে হইবে। ঐ ছোট মাথাটি সুদ্ধ তাহার ঐ সরু লম্বা গলাটি গলি-ঘুঁচির ভিতরে অনেক দূর অবধি ঢুকাইয়া সে নিশ্চয়ই অতি সহজে খাবার জিনিস খুঁজিয়া আনিতে পারিত।

 এত বড় জানোয়ারের পক্ষে তাহার মাথাটি একটু বেশি ছোট বলিতে হইবে; তাহার ভিতরে মস্তিষ্ক খুব বেশি থাকা অসম্ভব। বাস্তবিক, বুদ্ধিটা একটু মোটা গোছের ছিল বলিয়াই বোধ হয়। আজকাল নিরীহ লোক বলিলেই তোমরা বেকুব বুঝিয়া লও। সেকালেও এর দস্তুরটা কতক ছিল দেখিতেছি। অস্ত্র-শস্ত্র তাহার শরীরে কিছু ছিল না বলিলেও হয়; বড় বড় নখ-দাঁতওয়ালা মাংসখেকো ডাইনোসরগুলির হাত এড়াইবার জন্য তাহার পলায়ন ভিন্ন আর উপায় দেখা যায় না। এখনকার তিমিগুলিরও কতকটা এইরূপ দশা। তিমি জাতীয় ছোট ছোট হিংস্র জানোয়ারদের ভয়ে তিমি সর্বদাই ব্যতিব্যস্ত থাকে। তিমিকে দেখিতে পাইলেই উহারা আসিয়া তাহাকে কামড়াইয়া খাইতে আরম্ভ করে। ব্রণ্টোসোরসেরও এইরূপ প্রতিবেশী গুটিকতক ছিল। ইহাদের ভয়ে হয়ত অনেক সময়ই বেচারী জলে নামিয়া গা ঢাকা দিয়া থাকিত। সেখানে গাছপালারও অভাব ছিল না; আর কেহ তাড়া করিলে সাঁতরাইয়া তাহাকে ফাঁকি দেওয়াও যাইত। ইহার শরীরের গঠন দেখিলে মনে হয় যে, এই জন্তু সাঁতরাইতে খুব পটু ছিল।

 এই সকল জন্তুর চিহ্ন অনেক সময় এরূপ স্থানে এবং এরূপ অবস্থায় পাওয়া যায় যে, তাহা দেখিয়া বোধ হয় তাহারা কাদায় ডুবিয়া মারা পড়িয়াছিল। খাল, বিল, হ্রদ ইত্যাদির ধারে অনেক সময় ভয়ানক কাদা থাকে, সেই কাদায় পড়িয়া কত জন্তু এখনো মারা যাইতেছে। জলের গাছপালার ঠাণ্ডা রসাল ডগাগুলি অনেক জন্তুরই খুব প্রিয় বস্তু। বিশেষত সেই জল যদি লোনা হয়, তবে তাহার ধারের পাঁক চাটিয়া নিরামিষভোজী জন্তুরা যারপরনাই সুখ পায়! যতক্ষণ পেটে স্থান থাকে, ততক্ষণ বসিয়া তাহা খাইতে হয়। এদিকে পাঁকের ভিতরে পা ঢুকিয়া যাইতেছে, তাহার খবর নাই। ব্রণ্টোসোরসের মতন লম্বা গলা থাকিলে একস্থানে বসিয়াই অনেকক্ষণ পর্যন্ত খাইবার সুবিধা হয়; আর ততক্ষণে তাহার পা হয়ত এতটা বসিয়া যায় যে, খাওয়া শেষ হইলে আর চলিয়া আসিবার ক্ষমতা থাকে না। সুতরাং সেইখানেই তাহার জীবনের শেষ হয়।

 আজকালকার কুমিরদের ডিম হয়। ব্রণ্টোসোরসের ডিম হইলে, তাহার এক একটা না জানি কত বড় হইত! কিন্তু ডাইনোসরেরা ডিম পাড়িত কি না, সে বিষয়ে পণ্ডিতদের সন্দেহ আছে।

 অনেক বড়-বড় ডাইনোসর সেকালে ছিল, কিন্তু তাহাদের সকলের কথা লিখিবার স্থান এই পুস্তকে নাই। এই সকল ডাইনোসর অনেক সময় খুব বড়-বড় হইত বটে, কিন্তু তাহারা সাধারণত নিরামিষভোজী সাদাসিধে জন্তু ছিল।

 মাংসখেকো ডাইনোসরগুলি এর চাইতে ছোট ছিল। তাই বলিয়া তাহারা নিতান্তই অবহেলার পাত্র ছিল, এমন ভাবিও না। আজকালকার বাঘ ভাল্লুকগুলিকে কি তোমরা একটুও হিসাব কর না? লেজসুদ্ধ বার ফুট লম্বা বাঘ অতি অল্পই আছে। কিন্তু এক একটা মাংসখেকো ডাইনোসর ত্রিশ ফুট লম্বা হইত! বাঘ হাতির সমান বড় হইলে, তবে এইরূপ একটা জন্তুর সঙ্গে তুলনা হয়।

 একটা মাংসভোজী ডাইনোসরের নাম ‘মিগালোসোরস্’ (ভীষণ কুম্ভীর)। ইহার চেহারা