পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮২৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দুটা নীচে। জন্তুটি বৃদ্ধ হইলে অনেক সময় তাহার নীচের দাঁত আমেরিকায় বিস্তর ম্যাস্টোডন ছিল। এখন সেখানকার একজাতীয় অসভ্য লোকদিগের মধ্যে এমন সব গল্প চলিত আছে যে, তাহা শুনিলে বোধ হয়, তাহাদের পূর্বপুরুষেরা ম্যাস্টোডন প্যালিয়োর্থীরিম দেখিয়াছে। ম্যাস্টোডনের হাড়কে টেপির জাতীয় নিরামিষভোঞ্জী সেকালেব জন্তু। | তাহারা বলে, ষাড়ের বাপের হাড়। তাহাদের বিশ্বাস যে, ষাড়ের বাপটা একটা ভারি ভয়ঙ্কর জন্তু ছিল;আর তখন পৃথিবীতে তেমনি বড় বড় মানুষও ছিল। মহাপুরুষ তাহার বজ্র দিয়া তাহাদের সকলকে মারিয়া ফেলেন। একদল ষাঁড়ের বাপ জুটিয়া মানুষের পোষা হরিণ, মহিষ ইত্যাদি জন্তুকে মারিয়া ফেলিতেছিল। মহাপুরুষ তাহার বজ্র দিয়া তাহাদের আর সকলকেই মারিয়া ফেলিলেন, খালি পালের গোদাটাকে মারিতে পারিলেন । সে তাহার বজ্র ঝাড়িয়া ফেলিতে লাগিল। শেষে পাজরে বজ্রের ঘা খাইয়া বড় বড় হ্রদের দিকে পলাইয়া গেল। সেখানে সে আজও আছে। আর এক রকমের হাতি ছিল, তাহার নাম ম্যাম। ইউরোপ এবং এশিয়ার অনেক স্থানে ম্যামথের দাঁত এবং হাড় পাওয়া যায়। পূর্বেই বলিয়াছি, এই সকল দাঁত কুড়াইয়া এখন অনেক লোকে ব্যবসায় চালাইতেছে। ম্যামথ হাতির মত বড় হইত। সাইবেরিয়ায় এখন অনেক ম্যামথের দেহ পাওয়া যায়। জন্তু মরিবার সময় বরফ চাপা পড়িলে, যতদিন না সেই বরফ গলিয়া যায় ততদিন সেই জন্তু পচে না। সাইবেরিয়ায় শীত খুব বেশি। সেখানে এত বরফ পড়ে যে, অনেক স্থলেই সেই প্রাচীনকাল হইতে তিন চারিশত ফুট উঁচু হইয়া বরফ পড়িয়া আছে আজও তা গলে নাই। এইসকল বরফের মধ্যে অনেক সময় মরা ম্যামথ পাওয়া যায়। হাজার হাজার বৎসর পূর্বে যে ম্যামথ (হয়ত বরফ চাপা পড়িয়া) মরিয়াছিল, তাহ একটুও পচে নাই এমনও দু-এক ভূলে দেখা গিয়াছে। বেওেফ নামক রুশিয়া দেশীয় ইঞ্জিনীয়ার ১৮৪৬ সালে ইন্দিগার্কা নদীতে এইরূপ একটা ম্যামথ পাইয়াছিলেন এই ম্যামথটা ১৩ ফুট উঁচু আর ১৫ ফুট লম্বা ছিল। এক একটা দত ৮ ফুট লম্বা, শুড় ৬ ফুট লম্বা। লেজ আর কানে লোম নাই তাহা ছাড়া সমস্ত শরীরে লোম। পিঠে আর কাধে এক ফুট লম্বা মোটা মোটা কেশরের মতন নোম। সেই মোটা ললামের নীচে খুব ঘন মোলায়েম পশম। লেজের আগায় একগ্রেস্থ লোম ছিল। জন্তুটার চেহারাটা দেখিতে বড়ই বিকট। হাতির চেহারা তাহর কাছে কিই নয়। মরিবার পূর্বে এই ম্যামথটা ডালপালা দিয়া জলযোগ করিয়াছিল। এতদিন পরে তাহার পেট টিরিয়া সেইসমস্ত ডালপালা পাওয়া গেল। তাহার অধিকাংশই একপ্রকার ঝাউগাঙ্কে ভাল ও পাতা। সেরকম গাছ আজও ঐ সকল স্থানে জন্মায়।