পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

থাকে! ভালোমানুষ নিরূপায় ভাবিয়া অগত্যা নিকটস্থ জাল দেখিতে গেল। জালের কর্তা ‘যুদ্ধং দেহি’ বলিয়া প্রচণ্ড লড়াই করিলেন। কিন্তু সাহেবের মাকড়সারই জয় হইল। সাহেব ইহা দেখিয়া ঘরের সমস্ত জাল ছিড়িয়া দিলেন। এবার বেচারা বড় বিপদে পড়িল। কিন্তু ছোট জন্তু বলিয়া বুদ্ধি কম নয়। সাহেবের কাগজপত্রের মধ্যেই বাড়ি করিল। ক্ষুধা হইলে এ জায়গায় মড়ার মতো পড়িয়া থাকিত, কোনো পোকা কাছে আসিলেই তাহাকে ধরিয়া ফেলিত।

 মাকড়সা খায় কি? এ কথায় উত্তর আমি তত সহজে দিতে পারিতেছি না। আমি এ পর্যন্ত এমন কিছু দেখি নাই যাহা পাইলে সে খুশি না হয়। জালে যাহাই পড়ক না, নড়িলে চড়িলেই হইল; কি পড়িয়াছে কে খোঁজ লয়? মশা মাছির ত কথাই নাই, ক্ষুধার সময় স্বজাতীয় দুই-একটি হইলেও চলে। কেহ কেহ ছোট-ছোট পাখি ধরিয়া খান।

 সকলের বড় যে মাকড়সা তাহার নাম ‘টরাণ্টুলা।’ এই জাতীয় মাকড়সাই নাকি পাখি ধরিয়া খায়। এক সাহেব একবার তিনটি টরাণ্টুলা সংগ্রহ করিয়াছিলেন। তিনটিকেই এক খাঁচায় (খাঁচায় থাকিবার যোগ্যও বটে, এক-একটা যে বড়!) রাখা হইল। প্রথম প্রথম কয়েকদিন তাহারা কিছুই খাইল না। তারপর কয়েক খণ্ড মাংস চাটিয়া যেন তাহাদের ক্ষুধা বাড়িয়া গেল। তখন একটা আর দুইটাকে ধরিয়া খাইয়া ফেলিল। শেষটি আনিয়া সাহেব বিলাতের প্রাণীশালায় উপহার ছিলেন। সেখানে তাহাকে ছোট-ছোট ইঁদুর খাইতে দেওয়া হইত। প্রথম প্রথম ইঁদুরটির কিছুই ফেলা হইত না, শেষটা যেন টরাণ্টুলা মহাশয় বুঝিতে পারিলেন যে ইঁদুরের অভাব হইবে না। তখন থেকে কেবল মাথাটি খাইতে লাগিলেন।

 গায়ের কাপড় ময়লা হইলে আমারা ধোপার নিকট দিই। মাকড়সার ধোপা নাই, কিনতু সেও একটা খোলস পুরানো হইলে সেটাকে বদলাইয়া ফেলে। আমরা অনেক সময় দেখিয়াছ মরা মাকড়সাটা হাত পা কোঁকড়াইয়া জালে ঝুলিতেছে—বাস্তবিক হয়তো সেটা মাকড়সার খোলসমাত্র। এক-একটি খোলস এত পরিপাটি যে চিনিবার জো নাই। সুক্ষ্ম সূক্ষ্ম লোমগুলি পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাইতেছে।

 মাকড়সার বড় বুদ্ধি। একটি বাড়ির বারান্দায় একটা মাকড়সা জাল পাতিয়াছিল। বাতাস আসিলেই জালের নীচের দিকটা উঠিয়া আসিত;বেচারা বড় জ্বালাতন হইত। ভাবিয়াচিন্তিয়া সে একখানা ছোট লাঠি টানাটানি করিয়া লইয়া আসিল। বাসায় আসিবার সময় সেই লাঠিখানা জালে ঝুলাইয়া দিত; তাহাতে নঙ্গরের কাজ হইত।

 মাকড়সার জালে বড় পোকা পড়িলে দড়ি কাটিয়া তাহার যাইবার সহায়তা করে।

 একপ্রকার মাকড়সা আছে, তাহারা মাটিতে গর্ত খুড়িয়া ঘর বাঁধে। ভিতরে সাটিনের মতো মসৃণ। দেখিতে কাবুলী মেওয়া-ওয়ালাদের টুপির মতো ক্রমে সরু হইয়া গিয়াছে। একটি দরজাও আছে। দরজাটি মুখে এমন সুন্দরভাবে লাগে যে ভিতর হইতে ঠেলিয়া না দিলে খোলা যায় না। দরজার গায়ে ছোট-ছোট ছিদ্র আছে তাহাতে নখ দিয়া ভিতর হইতে ধরিয়া রাখে। দরজার বাহিরের দিকে মাটি মাখাইয়া এমন করিয়া রাখে যে সহসা চেনা যায় না।

 মাকড়সার প্রস্তাব আমরা শেষ করিলাম। ভরসা করি তোমরা আর মাকড়সা দেখিলেই মারিতে যাইবে না।