পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সবুজ টিয়া, লাল গলাবন্ধওয়ালা টিয়া, ময়না, চন্দনা, ফুলটুসী, কাজলী, করিদি ইত্যাদির নাম করা যাইতে পারে। ‘হীরেমন’ ‘লালমন’ ইত্যাদি আমির গোছের পাখিগুলির অধিকাংশই বিদেশী।

 বিদেশী পাখিগুলিকে অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি স্থান হইতে আনে, আর দেশী পাখিগুলিকে কি করিয়া পায় জান? দেশী পাখির অনেকগুলিকে বাচ্চা অবস্থায়ই তাহাদের বাসা হইতে ধরিয়া আনা হয়। ইহা ছাড়া ধাড়ি পাখিগুলিকেও জাল দিয়া ধরে। এই-সকল ধাড়ি পাখি কিছুতেই পোষ মানে না। ইহাদিগকে জলে ছোপাইয়া ধোঁয়া লাগাইয়া প্রয়োজন হইলে কিঞ্চিৎ আফিমের ব্যবস্থা করিয়া ‘ভালোমানুষ’ করা হয়। অল্পবুদ্ধি খদ্দের খুব সন্তুষ্ট হইয়া ইহাদিগকে কিনে, কিন্তু বাড়িতে আনিয়াই আপনার ভ্রম বুঝিতে পারে।

 তোমাদের অনেকেই হয়তো নিম্নলিখিত গল্পটি পড়িয়াছ। এক ব্যক্তি একটা টিয়াপাখি পুষিয়াছিল, সেটা কেবলমাত্র, একটা কথা বলিতে জানিত — ‘তাতে আর সন্দেহ কি? পাখিটা আর কোনো কথা কহিতে পারে না দেখিয়া সেই ব্যক্তি তাহাকে বিক্রি করিবার জন্য বাজারে লইয়া গেল। একজন শৌখিন লোক আসিয়া পাখির দাম জিজ্ঞাসা করিল, উত্তর হইল, দুই হাজার টাকা। ক্রেতা কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল—‘বটে! তোমার পাখির এত দাম বলিতেছ, সে কি এত দামের উপযুক্ত?’ পাখিওয়ালা বলিল, ‘পাখিকেই জিজ্ঞাসা করুন।’ শ্রোতা পাখিকে জিজ্ঞাসা করিল, ‘কিরে, তুই কি এত দামের উপযুক্ত?’ পাখি বলল, ‘তাতে আর সন্দেহ কি?’ এই কথাগুলিতে সেই ব্যক্তি নিতান্ত সন্তুষ্ট হইয়া দুই হাজার টাকায় সেই পাখি কিনিল।

 অল্পদিন পরেই পাখির গুণ বাহির হইয়া পড়িল। তখন দুঃখিত হইয়া সেই ব্যক্তি বলিল, ‘এত টাকায় এই পাখিটা কিনিয়া বড়ই নির্বোধের কাজ করিয়াছি।’ এমন সময় পাখি বলিল, ‘তাতে আর সন্দেহ কি?’

 টিয়াপাখিগুলি অনেক সময় অতিশয় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়া থাকে। আমি একটা পুস্তকে পড়িয়াছি যে এক ভদ্রলোক, তিনি তোৎলা ছিলেন, একবার কোনো বন্ধুর বাড়িতে গিয়াছিলেন। সেই বন্ধুর বাড়িতে পলি নামক একটা কাকাতুয়া ছিল। আমোদ দেখিবার জন্য তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘প-প্‌ প প পলি, ক-ক্‌ক-কটা বেজেছে?’ পলি উত্তর করিল ‘চা-চ্‌-চ্‌ চা চারটে!’


জানোয়ারের শিক্ষা

 সার্কাসওয়ালারা নানারকম জন্তুর তামাশা দেখায়। যাহারা দেখে, তাহারা খুবই আমোদ পায়, কিন্তু এই-সকল জন্তুকে শিখাইতে কত বুদ্ধি, কত পরিশ্রম, কি পরিমাণ সাহস এবং কতদূর অধ্যবসায়ের প্রয়োজন হইয়াছিল, তাহা অল্প লোকেই ভাবিয়া দেখে।

 গাধা পিটিয়া ঘোড়া করিবার কথা আমরা শুনিয়াছি, কিন্তু বনের হিংস্র জন্তুকে, ধরিয়া আজকাল লোকে তাহার দ্বারা যে-সকল আশ্চর্য কাজ করাইয়া লইতেছে, তাহার কথা ভাবিয়া দেখিলে গাধা পিটাইয়া ঘোড়া করা (অর্থাৎ গাধার মতন র্নিবোধ এবং ঠ্যাটা জন্তুকে