পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কে যেন একসরা খাবার বাহির করিয়া দেয়। কাঙ্গালীরা দেখিতে পায় না কে খাবার দিল, যে দেয় সেও দেখিতে পায় না কে খাবার নিল এখন হইয়াছে কি, যত জন কাঙ্গালী আসে, রোজ দেখা যায় যে তাহার চেয়ে এক সরা খাবার বেশি দিতে হয়। ব্যাপারখানা কি দেখিবার জন্য পাহারা বসান হইল। তখন দেখা গেল যে কাঙ্গালীরা চলিয়া গেলে সেই বাড়ির একটা কুকুর আসিয়া ঘণ্টার দড়ি ধরিয়া টানে, আর খাবারের সরাটি বাহির হইলে তাহা মুখে করিয়া ছুট দেয়। তাহা দেখিয়া সকলে খুব হাসিল। এখন হইতে রোজ একসরা খাবার লইয়া যাইত, কেহ তাহাকে কিছু বলিত না।

 আমাদের ‘ভিকু’ বলিয়া একটা কুকুর ছিল। সে রাত্রে পাড়া বেড়াইসা আসিয়া বাড়ির দরজা বন্ধ দেখিলে ঠিক মানুষের মতো করিয়া দরজা নাড়িত। বাড়ির লোক ভাবিত কে যেন আসিয়াছে, তা তাহারা ব্যস্ত হইয়া দরজা খুলিয়া দিত, আর দেখিত ভিকু লেজ নাড়িতেছে।

 ভিকু যে খালি এমনি করিয়া লেজ নাড়িত তাহা নহে। সে তাড়া খাইলে একটা ঘরে গিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিতে শিখিয়াছিল।

 সাধারণত সে অপরিচিত লোক দেখিলে বকিয়া তাড়াইয়া দিত। পাখি, ইন্দুর, বিড়াল পঞ্চাশ হাত দূর দিয়া গেলেও তাহাকে গালি না দিয়া ছড়িত না, কাছে আসিলে তো ধরিয়াই খাইত। কিন্তু আসলে সে বড় মহাশয় লোক ছিল। একবার আমাদের ছাতের উপর একটা পায়রাকে বাজ ধরিয়া তাহার চোখ কানা করিয়া দেয়। পায়রাটা অন্ধ হইয়া নিচে পড়িয়া গেল, আর পড়িল ঠিক ভিকুর সামনে। অন্য সময় হইলে ভিকু তাহাকে মারিয়া ফেলিত, কিন্তু সেই পায়রাটাকে সে তেমন কিছুই করিল না। সে খালি খানিক মনোযোগের সহিত তাহাকে দেখিল। তারপর যেই বুঝিল যে পায়রাটার কোনো বিপদ হইযাছে, অমনি সে তাহাকে পাহারা দিতে বসিল, আর সেখান হইতে উঠিল না। বিড়ালগুলি পায়রাটাকে খাইবার জন্য উঁকি ঝুঁকি মারিতেছিল—কিন্তু ভিকুর ভয়ে তাহার কাছে আসিতে পারে নাই। এমনি করিয়া দুদিন গেল। তাহার পরের দিন কোন কারণে ভিকুকে হাসপাতালে পাঠাইবার দরকার হয়। সেই দিন রাত্রেই বিড়ালেরা সুবিধা পাইয়া পায়রাটাকে খাইয়া ফেলিল।

 আলিপুরের বাগানে একটি ছোট বানরকে বিস্কুট দেওয়া হইতেছে। সেই বিস্কুটের সঙ্গে একটি মারবেলও তাহার হাতে দেওয়া গেল। মারবেলটি পাইয়াই সে মুখে পুরিয়া দিল, ভাবিল ওটাও বুঝি একরকমের বিস্কুট। বারকতক ওটাকে কামড়াইয়া যখন সে দেখিল যে সেটা ভারি শক্ত, দাঁতে ধরে না, তখন সে তাহাকে জলে ভিজাইয়া রাখিল। ভিজাইলে শক্ত জিনিস নরম হয় এ কথা সে জানিত, কিন্তু সকল জিনিসই যে নরম হয় না, এটুকু তখনো তাহার শিক্ষা হয় নাই।

 আর একটি বানরের গল্প এক ভদ্রলোকের মুখে শুনিয়াছিলাম, কতদূর সত্য বলিতে পারি না। বানরটি একটা হাসপাতালের কাছে থাকিত, লোকের অসুখ হইলে সেখানে যায় আর ডাক্তারবাবু তাহাদের হাত দেখিয়া ঔষধ দেন, ইহা সে দেখিত। তারপর একদিন তাহার নিজের অসুখ করিলে সেও গিয়া খুব গম্ভীর ভবে তাঁহাকে হাতখানি বাড়ইয়া দিল।

 একটা কুকুরের পা ভাঙ্গিয়া যায়, একজন ডাক্তার ঔষধ দিয়া তাহাকে ভালো করিয়া