পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

লকে গিলে এমন মাছও আছে, তাহাকে বলে রাঘব।”

 তোমরা তো এ কথা হাসিয়াই উড়াইয়া দিবে। বাস্তবিক, আটশত মাইল লম্বা মাছের জায়গা সমুদ্রে ভিতরেও হইবে না, তাহাকে যাহারা গিলিবে, তাহদের জায়গা হওয়া তো পরের কথা। কিন্তু তাই বলিয়া এমন কথা মনে করিও না যে সেকালের লোকে তিমি দেখে নাই। আমাদের এই বঙ্গ সাগরেই তিমি আছে। এইরকম একটা জানোয়ারের দেহ অনেক বৎসর আগে আরাকানের নিকট পাওয়া গিয়াছিল, তাহার চোয়ালের হাড় দুখানি আমাদের যাদুঘরে এখনো দেখিতে পাওয়া যায়। আমাদের ‘বনের খবর’ যিনি লেখেন, তিনি একবার বৰ্মা যাইবার সময় একটা তিমি দেখিতে পাইযাছিলেন। রঘুবংশে লেখা আছে যে তিমিরা হাঁ করিয়া জীবজন্তু সুদ্ধ নদীর মুখের জল টানিয়া লয়, তারপর মুখ বন্ধ করিয়া মাথার ছিদ্র দিয়া সেই জল বাহির করিয়া দেয়। বাস্তবিকই তিমির মাথায় ছিদ্র আছে, সেই ছিদ্র দিয়া পিচকারীর মতো জল বাহির হয়।

 আসল কথাটা বোধহয় এই যে, সে কালের লোকেরা জাহাজে করিয়া সমুদ্রে যাইত আর তিমি দেখিতে পাইত। দেখিয়া তাহদের এমনি আশ্চর্য বোধ হইত যে, তাহাদের হিসাব করিবার অবসরই হইত না, জিনিসটা কতখানি বড়। ষাট হাত হইলে তাহারা হয়তো ভাবিত একহাজার হাত। ইহার উপরে হয়তো আবার দেশে ফিরিয়া গল্প করিবার সময় লোকের তাক লাগাইয়া দিবার ইচ্ছাও যে একটু না থাকিত এমন নহে, কাজেই হাজার হাতের জায়গায় দেখিতে দেখিতে দশহাজার হাত হইয়া যাইত। তারপর সেই গল্প শুনিয়া কবিরা যখন তাহার কথা লিখিতে বসিতেন, তখন তো বুঝিতেই পার।

 এমন ঘটনা সকল দেশেই ঘটিয়াছে। আরব্য উপন্যাসে সিন্ধ বাদের গল্প তোমরা পড়িয়াছ কি? তাহারা সমুদ্রের চড়ায় উঠিয়া রান্নার আয়োজন করিয়াছিল; জনিত না, যে সে চড়া নয় একটা মাছ। আগুনের তাত লাগিয়া মাছটা জলে ডুব দিল, আর সিন্ধ বাদ আর তাহার দলের লোকেরা সমুদ্রে হাবুডুবু খাইতে লাগিল।

 এ ত ঢের দিনের কথা, গত পৌনে দুইশত বৎসরের ভিতর একজন নরওয়ে দেশীয় পাদ্রি এইরূপ অদ্ভুত জানোয়ারের কথা লিখিয়া গিয়াছেন। সেই জানোয়ারের নাম নাকি ক্র্যাকেন (Kraken);সে ভাসিয়া উঠিলে নাকি আধমাইল চওড়া একটি ছোট্টখাট দ্বীপ হয়।

 যা হোক আমি শুধু আষাঢ়ে গল্প বলিতে আসি নাই। আমি বলিতে চাই যে, সেকালের লোকেরা এত বেশি বাড়াইয়া বলিতে গিয়াই সব মাটি করিয়াছে নহিলে আমরা সহজেই বিশ্বাস করিতে পারিতাম যে তাহারা মাঝে মাঝে অতি বিশাল একটা জানোয়ার সমুদ্রে দেখিতে পাইত। তাহাব সবগুলিই একরকমের জন্তু না হইতে পারে, কিন্তু তাহার কোন কোনটা হয়ত তিমির চেয়ে বড় ছিল। সেইগুলিকেই হয়ত আমাদের দেশের সেকালের লোকেরা ‘তিমিঙ্গিল’, ‘রাঘব,’ ইত্যাদি নাম দিয়াছিল।

 এখনো মাঝে মাঝে ‘সাগরের সাপ’ (Sea Serpent) বলিয়া একটা বিশাল জন্তুর কথা শুনিতে পাওয়া যায়। মাসখানেক আগেও খবরের কাগজে পড়িয়াছিলাম যে এক জাহাজের লোকেরা আবার একটা সাগরের সাপ দেখিয়াছে। এ-সব কথা শুনিয়া কেহ বিশ্বাস করে কেহ হাসে। যাহা হউক ভালো ভালো লোকে এরূপ জন্তু দেখিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আসিয়া তাহার সংবাদ দিয়াছে, এ কথা সত্য। ইহাদের কথা যদি বিশ্বাস করিতে হয়, তবে