পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৭৫

বড়-বড় পোকারা যখন তাকে তাড়া করে তখন সে একরকম নীল রঙের ধোঁয়া ছাড়তে থাকে তাতে শক্রর দম আটকে যায়।

 স্কাংক (Skunk) বলে একরকমের জন্তু আছে, তার কায়দাটাও অনেকটা এইরকমের। তার কাছেও একরকমের রস থাকে। সে রসে ঝাঁজ নাই, কিন্তু তার এমনি বিদঘুটে গন্ধ যে, সে গন্ধ নাকে গেলে ভুতকেও ‘বাপ্লেইস্ রে!’ বলে পালাতে হয়।

 শিয়ালেরও এইগোছের একটা বদনাম আছে। আমাদের একজন বুড়ো চাকর বলেছিল, “কুকুর শিয়ালের কি করবে? গন্ধে তার কাছে ঘেঁষতে পারলে তো? শিয়াল ভারি অসভ্য!”

 অনেক মাছ আছে, তারা প্রায়ই পুকুর বা নদীর তলায় সঙ্গে মিশে থাকে। ধরতে গেলে সেখানকার জল এমনি ঘোলা করে দেয় যে তখন তাকে দেখতে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে আর সেই ফাঁকে সে সেখান থেকে চম্পট দেয়।

 সমুদ্রের ভিতরে অক্টোপাস বলে একরকম জানোয়ার আছে। ভগবান তাদের প্রত্যেককে একটি করে কালির থলে দিয়েছেন। বিপদের সময় সেই কালি ছড়িয়ে তারা জল ঘোলা করে দেয়। তখন আর তাদের পালাতে কোনো মুশকিল হয় না।

 টিকটিকি নিতান্ত ফাঁপরে পড়লে তার লেজটি ফেলে রেখে ছুট দেয়। লেজটি পড়েই লাফাতে থাকে, আর শক্রতা দেখে আশ্চর্য হয়ে টিকটিকির কথা ভুলে যায়। তার কিছুদিন পরেই টিকটিকির আরেকটা নতুন লেজ বেরয়।

 যাহোক পালানই তো আর যুদ্ধের একমাত্র উপায় নয়, আর সে উপায় কিছু জন্তুরা পছন্দও করে না। সে-সকল জস্তুর কথা বলা হল, তারাও নিজেদের ভিতরে খুবই তেজের সঙ্গে লড়াই করে থাকে। আর সে সময় তাদের অনেকরকম অদ্ভুত কায়দা খেলাতেও দেখা যায়।

 ছাগলে ছাগলে যখন লড়াই হয়, তখনকার কাণ্ডটা নিশ্চয় তোমরা সকলেই দেখেছ। কাজেই আর তার কথা বাড়িয়ে বলবার দরকার নাই। প্যাঁচার যুদ্ধের আয়োজনটি তার চেয়েও সরেশ। যুদ্ধের সময় কোমর বেঁধে উঠে দাঁড়াতে হয়, এই তো আমরা জানি। কিন্তু প্যাঁচা তা না করে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে ছেলেবেলায় একবার আমি একটা আম গাছে উঠতে গিয়ে হঠাৎ একটা প্যাঁচার বাসা দেখতে পেলাম। বাসায় তিনটা ছানা ছিল, তারা সকলেই আমাকে দেখে মস্ত মস্ত হাঁ করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। আমি তো তাতে হেসেই অস্থির। সেখানে একজন বুড়ো মানুষ ছিলেন, তিনি তখন আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে ঐ হচ্ছে প্যাঁচার লড়াইয়ের কায়দা। ওদের গলা ছোট বলে ঠোঁট বাড়িয়ে ঠোকরাবার তেমন সুবিধা হয় না। কাজেই নখ দিয়ে লড়াই করতেই তারা বেশি ভালোবাসে, আর সে কাজটা চিৎ হয়ে করতে পারিলেই যুদ্ধটি জমাট হয়।

 মোরগের লড়াইও বেশ মজার। ঠিক ছোট কুস্তিওয়ালার মতো দুটো মোরগ এসে একপা বাড়িয়ে স্থির ভাবে সামনা সামনি হয়ে দাঁড়ায়, আর গলা নিচু করে প্রাণপণে চোখ রাঙ্গা রাঙ্গি করতে থাকে। হঠাৎ একবার দেখবে, দুজনেই উছলে উঠছে, আর গলা ফুলিয়ে বিষম ঠোকরাঠকরি জুড়ে দিয়েছে। দুজনের চেষ্টা কিসে শত্রুর ঘাড়ে কামড়ে ধরে তাকে জয় করবে। মোরগ দুটো বাচ্চা হলে, যুদ্ধ ততদূর গড়াবার আগেই হয়তো একটা বড় মোরগ ছুটে এসে তাদের ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়।