পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৮৩

উপস্থিত হল, তখন তো আর তার আনন্দের সীমাই রইল না। সেই সুরুয়া খাওয়া হলে কাপ্তান যেই বললেন, “এখন শোও গিয়ে”, অমনি নিতান্ত লক্ষ্মীটির মতো সে তার সেই খড়ের বিছানায় উঠে শুয়ে রইল।

 এতদিনে সেই কাপ্তানটির সঙ্গে তার খুবই বন্ধুত্ব হয়েছে। এখন আর তাঁকে ছেড়ে সে এক মুহূর্তও থাকতে রাজি হয় না, খানার সময়ই হোক, আর যুদ্ধের সময়ই হোক, ছায়ার মতো তাঁর সঙ্গে সঙ্গে আছেই।


বানরের বাঁদরামি

 তোমরা বানরের গালের থলি দেখেছ? বানর তার এই থলি দুটার ভিতরে খাবার পুরে রাখে, তারপর অবসর মতো সেগুলোকে থলি থেকে বার করে খায়। থলির ভিতরে বেশি খাবার পুরলে সেটা ফুলে ওঠে, তখন বানরের চেহারাখানি দেখতে বেশ মজার হয়।

 একবার এক চিড়িয়াখানায় একটা বানরের এই থলির ভিতরে একটা বাদাম আটকে গেল, সেটাকে সে কোনোমতেই বার করতে পারল না। তার দরুন তার বড় যন্ত্রণা হতে লাগল, ক্রমে থলিসুদ্ধ টাটিয়ে লাল হয়ে উঠল, তখন সেই থলি কেটে বাদামটি বার করে আবার থলি সেলাই করে দেওয়া ভিন্ন উপায় রইল না।

 তোমরা হয়তো বলছ, ‘আহা বেচারা!’ কিন্তু সেই বানর ভাবল যে কি মজাই হয়েছে। সে তখনি চিমটিয়ে সেলাই খুলে ফেলে সেই ফুটোর ভিতর দিয়ে যা-তা ঢুকিয়ে দিতে লাগল, শুধু যে বাইরের জিনিস সে সেখান দিয়ে মুখের ভিতর ঢোকাত, তা নয়, মুখের ভিতরের জিনিসও সেই ফুটোর ভিতর দিয়ে বার করে আনত। যখন সে এ-সব কাণ্ড করত, তখন তার খাঁচার আর সব বানরের আর আশ্চর্যের সীমাই থাকত না। তারা তার চারদিকে ঘিরে বসে হাঁ করে তামাশা দেখত। সেও তাতে খুব মজা পেয়ে লম্বা লম্বা খড় মুখে দিয়ে, সেগুলোকে সেই থলির ফুটোর ভিতর দিয়ে টেনে বার করে তাদের আরো তাক লাগিয়ে দিত।

 বাস্তবিক এটা বানরের পক্ষে বাহাদুরীর কাজ হয়েছিল বলতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এতে তার ঘা শুকাবার পক্ষে বড়ই অসুবিধা হতে লাগল। তখন কাজেই তাকে সেই খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতে হল, যাতে তার আর তামেশগির না জোটে। কয়েক দিন সে খুব নরম জিনিস ছাড়া আর কিছু খেতে পেলে না, তাকে শোবার জন্য খড় দেওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। তখন আর সে কাকে ম্যাজিক দেখাবে? আর কি দিয়েই বা দেখাবে? কজেই তার ঘা সারতে আর বেশি দেরি হল না।