পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 খাঁচার সামনের গরাদের ভিতর দিয়ে হাত গলিয়ে হুণ্ডারটাকে নাকে শুড়শুড়ি দেওয়া বানরটার ভারি আমাদের বিষয় ছিল। সে হুণ্ডারটিকে দেখতে পেত না, অথচ আন্দাজের উপরেই ক্রমাগত ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে পাগল করে তুলত। হুণ্ডারটা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই বানরটার হাতে কামড়াতে পারত না, বেচারা খালি ক্ষেপে অস্থির হওয়াই সার হত।


প্রবাসী পাখি

 কতগুলো বক হাঁটু-জলে নেমে ভারি গম্ভীরভাবে মাছ ধরবার ফন্দি আঁটাছে, একসময় একটি রাজহাঁস উড়ে এসে সেইখানে নামল। বকগুলো তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘বাঃ চোখ লাল, মুখ লাল, পা লাল, তুমি কে হে?’

 হাঁস বলল, ‘আমি হাঁস।’

 বকেরা বলল, ‘তুমি কোত্থেকে আসছ?’

 হাঁস বলল, ‘মানস সরোবর থেকে।’

 ‘সেখানে কি আছে?’

 ‘সোনার পদ্মবন আছে, অমৃতের মতো জল আছে, আর মণি-মাণিকের বেদীওয়ালা গাছ আছে।’

 ‘শামুক সেখানে আছে কি?’

 ‘না।’

 এ কথায় বকগুলো হো হো করে হেসে বলল, ‘তবে সে ছাই জায়গা। শামুক নেই, খাব কি?’ তারা ঠিক কথাই বলে ছিল, যেখানে খাবার মিলে না, অন্তত আমি তো সেখানে গিয়ে থাকতে রাজি নই, তা সেখানে সোনার পদ্মফুলই থাক, আর মাণিকের বেদীই থাক।

 মানস সরোবরে ঢের লোক গিয়াছে। সেখানে সোনার পদ্মফুলও নাই, মাণিকের বেদী বাঁধানো গাছও নাই, হাঁসের এ-সব নিতান্তই বাজে কথা। তবে, তার কথার মধ্যে এইটুকু সত্য হতে পারে যে সে মানস সরোবর থেকে এসে ছিল।

 আমি পোষা হাঁসের কথা বলছি না, কিন্তু বুনো হাঁসগুলো যখন শীতকালে আমাদের দেশে আসে, তখন বাস্তবিকই তারা হিমালয় পার হয়ে আসে। মানস সরোবর থেকেও আসতে পারে, তার চেয়েও উত্তর থেকে, এমন-কি, সাইবিরিয়া থেকেও আসতে পারে।

 এ কথা অবিশ্বাস করার কোনে কারণ নেই, এ-সকল পরীক্ষিত বিষয়। অনেক পাখির এরকম অভ্যাস আছে। তাদের কারও বেশি শীত সয় না, কারও গরম সয় না, কারও কোনোটাই সয় না। হাঁসগুলো শীতকালে এসে আমাদের দেশে দেখা দেয়, বৈশাখ মাসে চলে যায়। শীতকালে বাংলা দেশের কোনো কোনো জায়গায় এদের কলরবে লোকের ঘুমানো অসম্ভব হয়। তারপর গরম পড়তেই তারা এ দেশ ছেড়ে পালাবার জন্য পাগল হয়ে ওঠে। কেন পাগল হয় তা আমি ঠিক বলতে পারি না। গরমের ভয়ে হতে পারে, আরো কারণ থাকতে পারে। যে কারণেই হোক, নিতান্ত দায়ে না ঠেকলে তারা তখন চলে যাবেই।