পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৮৭

 তখন শিকারীরা গুলি মেরে তাদের শেষ করে দিল।

 বরাহ যখন ক্ষেপে বসে, তখন তার কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞান থাকে না — আর সে যে কখন ক্ষেপে বসে তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। হয়তো শিকারীরা একটা শুয়োরকে তাড়া করেছে, শুয়োরটা দৌড়ে পালাচ্ছে, হঠাৎ কেমন করে একটা পাথরে পা লেগে শুয়োরটা পড়ে গেছে, অমনি আর কথাবার্তা নেই! সামনে গাছ জঙ্গল যা থাকে সে তাতেই তেড়ে গুঁতিয়ে সব ভেঙ্গে উপড়িয়ে সাবাড় করে দিল! ওদিকে শিকারীরা যে তাকে ধরে ফেলছে সে হুঁস তার নেই।

 একজন বড় শিকারী বলেছেন যে শুয়োর যখন তেড়ে আসে, তখন যদি তাকে এড়িয়ে চট্‌ করে তার পিছনের পা ধরে তোলা যায় তবে নাকি সে আর কিছু করতে পারে না। কথাটি সত্যি কিনা জানি না, কিন্তু আমায় যদি শুয়োরে তাড়া করে আমি তার ঠ্যাং ট্যাং ধরতে যাচ্ছি না, একেবারে একদৌড়ে একটা গাছের উপর চড়ে বসব!


জ্বালাতন

 পোকার জ্বালায় অস্থির হলাম—আর ব্যাঙের জ্বালায়। মাস দুই আগে ব্যাঙগুলো, মাছির মতো ছোট্ট-ছোট্ট ছিল, তখন তাদের দেখলে ভারি মায়া হত। ঠিক বুড়ো ব্যাঙদের মতোই তারা লাফিয়ে লাফিয়ে হাওয়া খেতে বেরুত, ধরতে গেলেও তেমন ব্যস্ত হত না, হাতের তেলোয় তুলে বসিয়ে দিলেও ভয় পেত না। এখন সেগুলো বড় হয়েছে এখন সিঁড়ি বেয়ে ঘরে উঠতে পারে। ঘর যেন আমাদের নয়, যেন তাদেরই ঘর। ভারি গম্ভীর হয়ে তারা তার ভেতরে বেড়িয়ে বেড়াবে, আমাদের গ্রাহ্যও করবে না। তাড়াতে গেলে ব্যস্ত হয়ে গলিঘুচির ভেতরে ঢুকতে যাবে, কিন্তু বাইরে যাবার নামও করবে না। এদের মারবার সাধ্য নাই, মুখখানি দেখলেই দয়া হয়। যেন বেচারারা কিছু জানে না, কারও মন্দ ভাবে না।

 মাঝে মাঝে ওরা ঘরের কোণে এসে দু পাশের দেয়ালে পা ঠেকিয়ে বেয়ে উঠবার বিষম চেষ্টা করে। তখন তাদের দেখলে বড়ই হাসি পায়। আর, যখন ছুটতে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে হাত-পা ছোঁড়ে, তখনোও মজা কম হয় না। কাজেই তাদের আর মারা যায় কি করে? ওদের জব্দ করার এক উপায় হচ্ছে খালি কাগজ দিয়ে ধরে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। তখন তারা ভারি আশ্চর্য হয়ে, খানিক কি যেন ভাবে, তারপর আবার লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে থাকে, যেন কিছুই হয়নি।

 পোকার কথা আর কি বলব? আগে এদের বড় দেখতে পাই নি, বর্ষার সঙ্গে সঙ্গে এসে উপস্থিত হয়েছে। এদের জ্বালায় রাত্রে আলো জ্বালিয়ে খাবার জো নাই, লাফিয়ে এসে ভাতে পড়তে চায়। এত রকমের পোকাও হয়! গঙ্গা ফড়িং, পিঁপড়ে, সাপের মাসি, গাঁধি, রাউটি, কত নাম করব? দশটার মধ্যে একটারও নাম জানি না হয়তো। চেহারাই-বা কতরকমের, রঙই-বা কতরকমের, গন্ধই-বা কতরকমের, রীতিনীতিই-বা কতরকমের, তার উপর আবার কামড়ের জ্বালাও আছে। গাঁধির আবার কামড়াতেও হয় না, তোমায় শুধু ফুঁকেই ফোস্কা ধরিয়ে দিতে পারে। মাঝে মাঝে এক-একটা ফড়িং আসে, সে এমনি গোঁয়ার যে, লাফিয়ে