পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৮৯৫

রীতি অপেক্ষা কিঞ্চিৎ বিভিন্ন ছিল, এই মাত্র। আর বর্তমান সময়েও যে এরূপ মিশ্রণের দৃষ্টান্ত একেবারেই নাই, তাহাই বা কি করিয়া বলি। অস্ট্রেলিয়ায় “ডাক মোল”(duck mole)নামক একটি ক্ষুদ্র চতুষ্পদ জন্তু অদ্যপি জীবিত আছে। উহা স্তন্যপায়ী শ্রেণীভুক্ত; কিন্তু পক্ষী সরীসৃপাদির ন্যায় ডিম্ব প্রসব করিয়া থাকে, এবং উহার মুখে হংসের চঞ্চর ন্যায় চঞ্চু।

 পৃথিবীতে প্রথমে যে সকল জীবের জন্ম হইয়াছিল, তাহারা নিতান্তই নিকৃষ্ট জাতীয় ছিল। নানারূপ কীট এবং শম্বুকাদি পৃথিবীর প্রথম প্রাণী তৎপর চিংড়ি কর্কটাদি তৎপর মৎস্য, তৎপর সরীসৃপ। এক সময়ে এই সরীসৃপেরা পৃথিবীতে অপ্রতিরথ প্রভুত্ব করিয়া গিয়াছে। সংখ্যায়, বলে, বিশালতায় কোন বিষয়েই ইহাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ডাইনোসরেরা ইহাদেরই দলভুক্ত ছিল। ইহার পরে পৃথিবীতে পক্ষী আসিয়াছিল। সর্বশেষে স্তন্যপায়ী জন্তুর সৃষ্টি হইয়াছে, এবং তাহার মধ্যে আবার মানুষ সকলের কনিষ্ঠ।

 স্তন্যপায়ীদিগের মধ্যে হস্তি, গণ্ডার প্রভৃতি স্থলচর্মী জন্তুর এক সময়ে পৃথিবীতে বিশেষ প্রাদুর্ভাব ছিল। পৃথিবীর নানা স্থানে নানা আকারে ইহারা বিরাজ করিত। এইরূপে অতিশয় বিচিত্র গতিতে পৃথিবীতে জীবপ্রবাহ বহিয়া চলিয়াছে। এই এই বিচিত্রতার মধ্যে এক বিষয়ে লক্ষ্যের বিশেষ স্থিরতা দেখা যায়। জীবপ্রবাহের গতি ক্রমিক উন্নতির দিকে। পৃথিবীতে ক্রমেই উন্নত হইতে উন্নততর জীব জন্মগ্রহণ করিতেছে।


বাদশাহি সারকাস

 রোমনগরের লোকেরা নানারকম জন্তু এবং মানুষের লড়াই দেখিতে বড় ভালবাসিত। এ সম্বন্ধে অনেক কথা তোমরা সময় সময় মুকুলে পড়িয়াছে। এক সময়ে আমাদের দেশেও যে ঐরূপ তামাসা হইত, তাহা হয়ত সকলের জানা নাই।

 আগে বিলাতে ‘ওরিএণ্টাল্‌ য়্যানুয়েল’ নামক একখানি বার্ষিক পত্রিকা বাহির হইত। ১৮৩৮ সালে উহার যে খণ্ড ছাপা হয়, তাহাতে এইরূপ তামাসার কিছু বর্ণনা আছে। এক সাহেব তাহা স্বচক্ষে দেখিয়া এইরূপ লিখিয়া গিয়াছেন:—

 একটা ছোট পুকুরে দুইটা কুমীর রাখা হইয়াছিল। ক্রমাগত দুমাস তাহাদের মুখ লোহার তার দিয়া বাধা ছিল;এই দু’মাস তাহারা কিছুই খাইতে পায় নাই। এরপর তাহাদিগকে ধরিয়া ডাঙ্গায় তুলিয়া তাহদের মুখের বাঁধন খুলিয়া দেওয়া হইল। বাঁধন খুলিয়া ছাড়িয়া দিতে তাহারা আবার জলের ভিতরে গিয়া ঢুকিল। দু’মাস একসঙ্গে এক পুকুরে থাকিয়া তাহদের মধ্যে কতকটা বন্ধুতা হইয়াছিল, সুতরাং তাহারা কোনরূপ ঝগড়া করিবার চেষ্টা করিল না। পুকুরটির জল বেশী গভীর ছিল না, সুতরাং তাহাদের চাল-চলন বেশ পরিষ্কার দেখা যাইতেছিল। তামাসার জায়গায় বিস্তর লোকের জনতা হইয়াছিল কিন্তু কুমীরেরা তাহা বড় গ্রাহ্য করল না। এমন কি, লম্বা বাঁশের খোঁচা দু-একটা না খাইলে, তাহদের বড় একটা নড়িবার চড়িবার মতলবও দেখা গেল না।

 এমন সময় একটা মরা ভেড়া আনিয়া ছোট কুমীরটার মুখের কাছে ফেলিয়া দেওয়া