পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৮৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ইহাদের কোন বাঁধা কাজ নাই। কোথায় যায় কোথায় থাকে তাহার ঠিক নাই, খালি মাঝে মাঝে এক একবার লেজ পরিয়া আসিয়া, দিন কয়েক তামাসা দেখাইয়া যায়।

 আমি দেখিয়াছি, যাত্রায় সং আসিলে, কোন কোন ছোট ছেলে ভ্যাঁ করিয়া কাঁদিয়া ফেলে। ধূমকেতু দেখিলে কেহ কাঁদে কি না জানি না। কিন্তু সেকালে অনেক লোকেরই বিশ্বাস ছিল, যে ধূমকেতু উঠিলে বড়ই ভয়ের কারণ হয়। হয় ভয়ানক মারিভয় হইবে, না হয় দুর্ভিক্ষ হইবে; আর কিছু না হইলেও অন্ততঃ একটা রাজা টাজা কেহ মরিবে।

 ক্রমে ইহাদের সম্বন্ধে লোকে যতই বেশী জানিয়াছে, ইহাদের সম্বন্ধে ভয়ও ততই কমিয়াছে। কিন্তু তাহা খুব অল্পদিনে হয় নাই।

 ধুমকেতু কি জিনিস, তাহা এখনও একেবারে স্থির হয় নাই। ইহাতে জিনিস যে খুব সামান্য—আর যাহা আছে, তাহাও যে ধোঁয়ার মতন, তাহা অনেকদিন আগেই বুঝা গিয়াছিল। একটু শক্ত ভারি জিনিসের অমন খামখেয়ালী চালচলন হয় না।

 খামখেয়ালী নয়? আচ্ছা অত বড় একটা লেজের তার কি দরকার বল দেখি! কোন কোনটির আবার একটি লেজে মন উঠে না। দুটি তিনটি— একটার আবার ছটি লেজ দেখা গিয়াছিল। আর একটা প্রথমে ভাল মানুষের মতন আসিয়াছিল; তারপর দুদিনের ভিতরে কোথা হইতে ছয় কোটি মাইল লম্বা এক লেজ বাহির করিল। কেহ কেহ আবার একলাটি আসেন, তারপর দুটিতিনটি হইয়া যান।

 এ সকল দেখিলে এই কথাই বলিতে হয়, যে শক্ত জিনিসের ওরূপ করা সম্ভব না। ধোঁয়া হইলে সবই সম্ভব হয়। ধোঁয়া যে, তাহা আর একটা বিষয় হইতে বেশ বুঝিবে। এক একটা ধূমকেতু এত মোটা, তাহার লেজটা লক্ষ মাইল পুরু, তথাপি তাহার ভিতর দিয়া পিছনের তারাগুলিকে পরিষ্কার দেখা যায়।

 এমন যন্ত্র আছে, যে তাহার ভিতর দিয়া কোন জ্বলন্ত জিনিসের আলোক পরীক্ষা করিলে, সেই জ্বলন্ত জিনিসটা কি তাহা বলিয়া দেওয়া যায়। এই যন্ত্রের নাম বর্ণবীক্ষণ (Spectroscope)। এই যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে, যে ধূমকেতুতে অঙ্গার লোহা, সীসে ইত্যাদির জ্বলন্ত বাষ্প আছে। এই বাষ্প এত পাতলা অবস্থায় আছে, যে মোটের উপরে তাহাদের পরিমাণ অতি সামান্য। এমন কি, কোন উপায়ে যদি একটা ধূমকেতুকে ধরিয়া ঘন করা যাইত, তাহা হইলে হয়ত তোমরা তাহাকে পকেটে পুরিতে পারিতে। খুব বড় ধূমকেতুর ওজনও কয়েক সেরের বেশী হইবে না।

 ডাক্তার হেলী নামক এক জ্যোতির্বিদ পণ্ডিত ছিলেন। তিনি পুরাতন পুস্তকাদি পড়িয়া দেখিলেন যে ১৫৩১, ১৬০৭ এবং ১৬৮২ খ্রীষ্টাব্দে এক একটা ধূমকেতু উঠিয়াছে। মোটামুটি প্রায় একই সময় অন্তর এক একটা ধূমকেতুর উদয় দেখিয়া, ডাক্তার হেলী মনে করিলেন, যে হয়ত একই ধূমকেতু ঐরূপ ৭৫।৭৬ বৎসর লাগে। এ কথা যদি সত্যি হয়, তবে ১৭৫৯ সালে ঐ ধূমকেতুর আবার ফিরিয়া আসিবার কথা। বাস্তবিক ১৭৫৯ সালে ঐরূপ এক ধূমকেতু আসিয়া উপস্থিত হইল। এরপর আর বুঝিতে বাকি রহিল না, যে ঐ ধূমকেতুটি এক নির্দিষ্ট পথে চলে, এবং একবার সেই পথ ঘুরিয়া আসিতে ৭৫।৭৬ বৎসর লাগে। ডাক্তার হেলী এই কথা প্রথম প্রমাণ করিলেন, সুতরাং এই ধূমকেতুর নাম “হেলীর ধূমকেতু” রাখা হইল।