পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯০৫

এতক্ষণে সিংহটা এমন ভয়ানক রাগিয়াছে, যে সকলেই সাণ্ডোকে বাহিরে চলিয়া আসিতে বলিতে লাগিল। কিন্তু স্যাণ্ডোর ইচ্ছা, আর একবার শেষ পরীক্ষা হয়। তাই তিনি সিংহের দিকে পিছনে ফিরিয়া দাঁড়াইয়া দেখিতে লাগিলেন সে কি করে। সিংহও সেই মুহুর্তেই লাফাইয়া তাহার পিঠে চড়িয়া বসিল। তখন স্যাণ্ডো তাহার মাথার উপর দিয়া হাত বাড়াইয়া দুহাতে সিংহের গলা ধরিলেন;তারপর একটানে তাহাকে নিজের মাথার উপর দিয়া আনিয়া মেঝেতে আছড়াইয়া ফেলিলেন।

 স্যাণ্ডো বাহিরে আসিলে দেখা গেল, যে মোজা পরা সত্ত্বেও সিংহ তাহাকে খুব আঁচড়াইয়াছে, তাহার সমস্ত শরীর বহিয়া রক্ত পড়িতেছে। স্যাণ্ডো তাহা গ্রাহ্যই করিলেন না। তিনি বেশ বুঝিতে পারিলেন, যে এখন আর ঐ সিংহের সঙ্গে প্রকাশ্যে লড়াই করাতে কোন মুশকিল হইবে না।

 তামাসার দিন মোজা আর মুখোশ পরাইবার সময় সিংহটা এমনি রাগিয়া গেল, যে দুইটা শিকল ছিড়িয়া বাহির হইল। যাহারা তামাসা দেখিতে আসিয়াছিল, তাহারা এখন প্রাণ লইয়া পলাইবার পথ পায় না। চারিদিকে খালি চেচামেচি আর ছুটাছুটি, এমন সময় সিংহ দেখিতে পাইল, যে স্যাণ্ডো তাহার পানে তাকাইয়া আছেন। আমনি তাহার সেই রাগ আর তেজ কোথায মিলাইয়া গেল—তাহার আর নড়িবার শক্তি রহিল না। তখন সুযোগ বুঝিয়া তাহার খাচাটা কাছে আনা হইল। তারপর স্যাণ্ডে এক ধাক্কা দিয়া তাহাকে চিং করিয়া খাচার ভিতরে ফেলিয়া দিলেন, আর তৎক্ষণাৎ খাঁচার দরজা আঁটিয়া দেওয়া হইল। দুঃখের বিষয়, এত কষ্ট করিয়া সিংহকে মোজা মুখোশ পরাইয়া খালি কষ্টই সার হইল। সে সিংহ এতক্ষণে স্যাণ্ডোকে বেশ চিনিয়া ফেলিয়াছে সে আর কিছুতেই যুদ্ধে প্রস্তুত নহে। ধাক্কা খোঁচা, গুতো, কিছুতেই আর রাগ হয় না—নিতান্ত ভাল মানুষের ন্যায় সে সকল প্রকার অপমান সহ্য করিতে লাগিল। শেষে উপায়ান্তর না দেখিয়া স্যাণ্ডো সিংহের লেজটাকে দিয়া দড়ি পাকাইতে আরম্ভ করিলেন। ইহাতে যদিও সিংহ খুব রাগিয়া লাফ দিয়া তাহাকে ধরিতে আসিল, কিন্তু একবার সাপটিয়া ধরিয়া আছাড় দিবার পরই সেই রাগটুকু চলিয়া গেল। তখন সিংহ হয়ত মনে মনে বলিতেছেন যে, “তুই মোর দাদা!” সে যুদ্ধ ত আর করিলই না;বরং স্যাণ্ডে যখন তাহাকে ধরিয়া কাধে তুলিয়া পইচারি করিতে লাগিলেন, তখনও সে ছোট খোকাটির মতন চুপ করিয়া রহিল, যেন ঐরাপ করিয়া চলাই তাহার অভ্যাস।

 আজকাল স্যাণ্ডে যেসকল তামাসা দেখান তাহার কথা কিছু বলিয়া আমরা এই গল্প শেষ করিব।

 এক জোড়া (৫২খানা) তাস লইয়া সেই আস্ত জোড়াকে ছিঁড়িয়া দুভাগ করা, যেমন তেমন বীরের কর্ম নয়—একবার চেষ্টা করিয়া দেখিলেই পার। স্যাণ্ডো তিন জোড়া তাস উপরি উপরি সাজাইয়া তাহা ছিঁড়িয়া দুভাগ তারপর সেই দুভাগকে আবার উপরি উপরি রাখিয়া ছিড়েন। অর্থাৎ ছয় জোড়া তাস একসঙ্গে ছিঁড়িলে যাহা হয়, তাহাই করেন।

 দশ মণ ওজনের একটি পোল বুকে লইয়া স্যাণ্ডো চিৎ হইয়া শয়ন করেন। তারপর দুজন লোক সেই পোলের উপর দিয়ে একখানি এক ঘোড়ারগাড়ি হাঁকাইয়া যায়। এইসকল জিনিসের ওজন সর্বশুদ্ধ প্রায় চল্লিশ মণ!

 স্যাণ্ডো বলেন যে, বলবান্ হওয়া সকলের পক্ষেই সম্ভব। তিনি ছেলেবেলা নিতান্তই

উপেন্দ্র---১১৪