একদল শিকারী শুয়র মারিবার জন্য একটা বন ঘেরাও করিয়াছে অন্য লোকেরা খানিক দূরে থাকিয়া তামাসা দেখিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। এক দুধওয়ালা দুধ বেচিয়া কেঁড়ে হাতে বাড়ী ফিরিতেছিল; সেও একটা উই ঢিপির উপরে উঠিয়া বসিয়াছে। বনের ভিতরে শুয়র ছিল কি না জানি না, কিন্তু একটা ছোট বাঘ সেখানে ছিল;সে বেচারা বেগতিক দেখিয়া পলাইবার চেষ্টা দেখিতে লাগিল। বনের ভিতর হইতে বাহির হইয়া সে চুপি চুপি ঐ উইটিপির নীচ দিয়া চলিয়াছে, এমন সময় দুধওয়ালা তাহাকে দেখিতে পাইল। এত বড় শিকার সামনে দিয়া চলিয়া যাইতে দেখিলে কে চুপ করিয়া থাকিতে পারে? বিশেষতঃ যদি একটা দুধের কেঁড়ে হাতে থাকে। সুতরাং দুধওয়ালা দুহাতে কেঁড়ে উঠাইয়া তাহার দ্বারা বাঘের মাথায় যথাশক্তি এক ঘা লাগাইল। সে জানিত না, যে দুধের কেঁড়ের চাইতেও বাঘের মাথাটা শক্ত হয়। কেঁড়েটি তো গুড়া হইয়া গেলই, বাঘ বড় হইলে সে যাত্রা প্রাণটিও যাইত। যাহা হউক একে বাঘ ছোট ছিল, তাহাতে আবার প্রাণের ভয়ে ব্যস্ত থাকায়, তাহার যুদ্ধ করিবার অবসর অল্পই ছিল। তথাপি সে দুধওয়ালা মহাশয়কে কয়েক চড় দিতে ছাড়ে নাই। তখন তাহারা তাহাকে হাসপাতালে লইয়া চলিল। সেখানে গিয়া তাহার জ্ঞান হইলে পর, সে এই বলিয়া আপসোস্ করিতে লাগিল যে, হায় রে, আমার চার আনার কেঁড়েটা ছিল।
এক কুয়ার ধারে একটা গরু ঘাস খাইতেছে, ঝোপের ভিতরে থাকিয়া বাঘের চেষ্টা, যে তাহার ঘাড়ে লাফাইয়া পড়িবে। ঠিক লাফ দিবার সময় গরুটা হঠাৎ টের পাইয়া সরিয়া পড়িল, আর বাঘ মহাশয় বেমালুম কুয়ার ভিতরে ঢুকিয়া গেলেন। বাঘের মতন জন্তু চুপচাপ একটা কুয়ার ভিতরে পড়িয়া থাকিতে রাজি হইবে, এরূপ কিছুতেই আশা করা যায়;সুতরাং তখন ভারি একটা সোরগোল শুনিয়া দুনিয়ার লোক আসিয় সেখানে জড় হইল, আর এরূপ অবস্থায় শাস্ত্রে যেমন লেখে, তদনুযায়ী লগী, বাঁশ ইত্যাদি সদ্ব্যবহার করিল।
শীতকালের সন্ধ্যাবেলায় এক ব্যক্তি ঘরের দাওয়ায় বসিয়া আগুন পোহাইতে ছিলেন, এমন সময় একটা বাঘ সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। বাঘটা যখন উঠানের মাঝখানে আসিয়াছে, তখন সেই ব্যক্তি তাহাকে দেখিয়া মনে করিলেন, যে ওটা বুঝি বাছুর! সুতরাং তিনি ঐরূপ সন্ধ্যার সময়েও বাছুর বাহিরে রাখার দরুন চাকরকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। বাঘ কিন্তু ততক্ষণে একেবারে পৈঠার উপরে আসিয়া উঠিয়াছে এখন তাহাকে বাঘ বলিয়া চিনিতে পারিয়াছে কিন্তু পলাইবার আর সময় নাই। তখন তিনি আর কি করেন—তাড়াতাড়ি হড়িশুদ্ধ আগুন বাঘের মুখে ঢালিয়া ঘরে ঢুকিয়া দরজা আঁটিলেন। বাঘের জীবনে আর কখনও এরূপ অভ্যর্থনা নাই, সুতরাং সে আর সেখানে বিলম্ব না করিয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়া পলাইল।