পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৩৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দেখিবে শ্বাস ফেলিতে একটু কষ্ট হয়—বাতাস যেন কমিয়া গিয়াছে। এই অসুবিধাটা ক্রমেই বাড়িতে থাকে। এর চাইতে আরো উপরে উঠিলে দেখিবে তোমার গায়ের চামড়া ফাটিয়া যাইতেছে। আরো উপরে উঠিলে তোমার নাকের লোমকূপগুলি দিয়া বিন্দু বিন্দু রক্ত বাহির হইবে। তাই বলিতেছিলাম অধিক উপরে উঠিলে অসুবিধা হইবে।

 একটা গল্প বলিয়া শেষ করিতেছি। নেডার নামক এক সাহেব খুব জোগাড়যন্ত্র করিয়া একটা প্রকাণ্ড বেলুন প্রস্তুত করিলেন। তাহার ভিতরে কত কিছু ব্যাপারেরই আয়োজন হইল; সাহেব মনে করিলেন গরু হারাইলে ইহার ভিতর তাহাও পাওয়া যাইবে। সকলে শশব্যস্ত হইয়া তামাশা দেখিতে আসিল; মনে করিল, ‘এটা যখন শূন্যে উঠিবে তখন না জানি একটা কি ব্যাপারই হয়।’ ‘বহারম্ভে লঘু ক্রিয়া’, বেলুনটা কত দূর উঠিয়াই পড়িয়া গেল। যাহারা তামাশা দেখিতে গিয়াছিল তাহারা বাড়ি আসিয়া হাসিতে লাগিল।


বেলুন : ৩

 মার্চ মাসের সখায় বেলুনের একটা ছবি ছিল, তাহাতে একটা নঙ্গর আঁকা ছিল। কেহ কেহ আমাদিগকে প্রশ্ন করিয়াছেন, ‘ঐ নঙ্গরটা ওখানে কেন আসিল?’

 নঙ্গরটা ওখানে নঙ্গরের কার্য করিতেই আসিয়াছে। নৌকার নঙ্গর জলে ফেলিলে নৌকা যেমন আর চলিতে পারে না, বেলুনের নঙ্গরও সেইরূপ। অনেক সময় বাতাসে ঠেলিয়া বেলুনটাকে এমন স্থানে লইয়া যাইতে চাহে যে বেলুনের আরোহী তাহা পছন্দ করেন না। তখন ঐ নঙ্গর নীচে নামাইয়া দেওয়া হয়। এইরূপ করিয়া যদি নঙ্গরটাকে নিম্নস্থ কোনো গাছ বা অন্য কিছুতে আটকাইয়া দেওয়া যায় তবেই বেলুন আর চলিয়া যাইতে পারে না।

 সম্প্রতি প্যারিস নগরে একপ্রকার বেলুন প্রস্তুত হইয়াছে, তাহাকে জাহাজের ন্যায় যেখানে ইচ্ছা সেইখানে চালাইয়া নেওয়া যায়। এই বেলুনের আকৃতি ময়রার দোকানে যে চম্‌চম্‌ বিক্রি হয় তাহার ন্যায়। চম্‌চম্‌টাকে থালের উপরে যেভাবে কাত করিয়া রাখে এই বেলুনও শূন্যে ঠিক সেইভাবে থাকে। বাতাসের ভিতর দিয়া চলিবার সময় যাহাতে বিশেষ বাধা না পায় তাহার জন্যই এরূপ করা হইয়াছে। এই চম্‌চমের এক মাথায় একটি হাল। আরোহীদের বসিবার দোলা চমচমের গায়ে ঝুলিতেছে। এই দোলায় বেলুন চালাইবার কল। কলটি তড়িতের বলে চলে। এই বেলুন চালাইতে তিনটি লোকের আবশ্যক। একজন হাল ধরে; আর একজন কল চালায়; আর একজন বালির বস্তাগুলির প্রতি দৃষ্টি রাখে—অর্থাৎ বেলুন নামিয়া পড়িতে চাহিলে বালির বস্তা খালি করিয়া তাহাকে হালকা করে।


নানা প্রসঙ্গ : ১

 একটি ছোট দীপের নীচে একটি বড় দীপ ধর। ছোট দীপটি নিবিয়া যাইতে চাহিবে কেন, জান? দীপ জ্বালাতে অঙ্গারাম্ল নামক একপ্রকার বায়ু জন্মে। সেই বায়ু প্রদীপের শিখায় মুখ হইতে বেগে ঊর্দ্ধে উঠিয়া যায়। বাতাসে অম্লজান নামক বায়ু আছে, তাহা আছে বলিয়াই