পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৩৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মদ খাইতে চাহিল না। সাহেব তাহাকে পরীক্ষা করিবার জন্য বলিলেন তোমাকে আট আনা দিব, তুমি খাও। সে খাইতে অস্বীকার করিল। তারপর সাহেব এক বোতল বাহির করিয়া তাহাকে কিছু মদ খাইতে দিলেন, ছেলেটি মদ খাইতে রাজি হইল না। সে অতি গরিব ছেলে, তাহার গায়ের জামা ছেঁড়া ছিল, কিন্তু সে এত প্রলোভনেও বিচলিত না হইয়া পকেট হইতে একটি মেডেল বাহির করিল, সেটি মদ্যপান নিবারণী সভার মেডেল। সেই মেডেলটি সাহেবকে দেখাইয়া বলিল, ‘আমি মদ খাইব না প্রতিজ্ঞা করিয়াছি। আপনার যত টাকা আছে তাহা সমস্ত দিলেও আমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিব না।’ এই ছেলেটির বাপ অত্যন্ত মদ খাইতেন, শেষে মদ্যপাননিবারণী সভার যত্নে তিনি মদ খাওয়া ছাড়িয়া ভালো লোক হইয়াছিলেন। মরিবার সময় এই মেডেলটি তিনি ছেলেকে দিয়া গিয়াছিলেন। বালকের কথা শুনিয়া সাহেব মদের বোতল নিকটবর্তী একটা পুকুরে ফেলিয়া দিলেন, এবং ‘নিজে আর কখনও মদ খাইব না’ এই প্রতিজ্ঞা করিয়া, যাহাতে অন্যেরাও মদ না খায় সেই চেষ্টায় জীবন উৎসর্গ করিলেন।


নানা প্রসঙ্গ : ২

দুষ্কর্মের প্রতিফল

 এক-একটা জানোয়ারের এক-এক প্রকার দুর্বলতা থাকে। একজন লোক শুনিল যে গায়ের পিরাণ খুলিয়া ফেলিবার মতন করিয়া পা উলটাইয়া মাথার উপর পর্যন্ত আনিয়া, তারপর মাথা নোয়াইয়া পেছনের দিকে হাঁটিয়া কুকুরের কাছে গেলে বড় ভয়ানক কুকুরটাও ভয় পায়। এই ব্যক্তির প্রতিবেশীর একটি সুন্দর ফলের বাগান ছিল। প্রতিবেশী অতিশয় কৃপণ স্বভাব ছিল। তাহার বাগানের দরজায় আবার একপ্রকাণ্ড কুকুর বাঁধা থাকিত। সুতরাং ফলগুলি দেখিয়া তাহার ক্ষুধাই বাড়িত, কিন্তু তাহার নিবৃত্তি হইবার কোনো আশা ছিল না। সে কুকুর সম্বন্ধে এই কথা শুনিয়াই ভাবিল যে এইবার প্রতিবেশীর ফলের বাগানে যাইতে হইবে। যাহা ভাবিল, কাজেও তাহা করিল। আস্তে আস্তে কুকুরের দিকে পশ্চাৎপদ হইতে লাগিল আর ভাবিতে লাগিল। বুঝি কুকুর পলাইয়াছে— বুঝি এইবার বাগানের ভিতর আসিয়াছি। কুকুর কিন্তু ভয় পায় নাই, তাহার গলায় বাঁধা শিকলটা লম্বা ছিল না বলিয়া সে এতক্ষণ চুপ মারিয়াছিল। উলটোদিকে হাঁটিতে হাঁটিতে যেই লোকটি তাহার কাছে আসিয়াছে, অমনি সে তাহার পাছা হইতে একবারের জলযোগের মতন এক টুকরা মাংস কামড়াইয়া লইল।

 অন্যায় কাজ করিতে গেলে তাহারই শাস্তি পাওয়া যায়।


আশ্চর্য প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব

 একজন স্পানিয়ার্ড আফ্রিকা দেশে পাখি মারিতে গিয়াছিল। পাখি শিকার করিয়া ফিরিয়া আসিবার সময় পথে একটা সিংহ আসিয়া তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল। পশুরাজের মুখভঙ্গি দেখিয়াই সে বুঝিতে পারিল যে কেবলমাত্র কুশল জিজ্ঞাসা করিবার জন্য তাঁহার আগমন