পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৪১

পাগুলিকে ঢাকিয়া রাখে।

 শেয়ালগুলি যে কতবার মরিয়া থাকে তাহার আর কি বলিব। এ বিষয়ে শেয়ালের সঙ্গে আর কেহ পরিবে না।

 বুনোরোহিতের আঁইস বলিয়া একপ্রকার আইস অনেক জায়গায় বিক্রয় হয়, অনেকে তাহাতে আংটি প্রস্তুত করিয়া হাতে দেয়। বাস্তবিকই জঙ্গলে কোনোরূপ রোহিত মাছ থাকে, বা ঐগুলি যে মাছেরই আঁইস, তোমরা এরূপ মনে করিও না। ঐ-সকল আঁইস একপ্রকার চতুষ্পদ জানোয়ারের। আমাদের দেশে এইরূপ জানোয়ার অতি অল্পই আছে, সুতরাং আমরা উহাদিগকে সচরাচর দেখিতে পাই না, দক্ষিণ আমেরিকায় এই জাতীয় অনেক জন্তু বাস করে। এইসকল জন্তুকে আর্মাডিলো বলা হয়। আর্মাডিলো অনেকপ্রকারের হইয়া থাকে। দক্ষিণ আমেরিকায় অনেক বাঁদর থাকে, তাহদের জ্বালায় আর্মাডিলো বড় ব্যতিব্যস্ত হয়। বাঁদরগুলি তাহাদিগকে প্রথমে খোঁচায়। যদি তাহার গর্তে প্রবেশ করে তবে লেজ ধরিয়া টানিয়া বাহির করিয়া যারপরনাই বিড়ম্বনা করে। কেবলমাত্র এক জাতের আর্মাডিলোর নিকট বানরেরা কিঞ্চিৎ জব্দ থাকে। এই আর্মাডিলোর নাম বল আর্মাডিলো (Ball Armadillo)। বল আর্মাডিলো উপায়ান্তর না দেখিলে হাত-পা গুটাইয়া লেজ-মাথা গুঁজিয়া পাছা সামনে টানিয়া লইয়া বেশ একটি নিরেট গোলাকার জিনিস হইয়া থাকে।

 বাঁদরেরা আর তখন ধরিয়া টানিবার মতো কোনো জিনিস পায় না, সুতরাং অপ্রতিভ হইয়া ঘরে ফিরিয়া যাইতে হয়।


নানাপ্রসঙ্গঃ ৫

 একদিন বড় ঝড় হইতেছিল। দশ-বারোজন লোক একটা ঘরে আশ্রয় লইল। মেঘে আকাশ অন্ধকার হইয়াছে। এমন সময় একখানা কালো মেঘ ঘরের উপরে আসিয়া থামিল। মেঘখানা ভয়ানক কালো, দেখিলেই ভয় হয়। ইহা দেখিয়া একজন বলিল, ‘মেঘটা অবশ্যই কিছু চায়, হয়তো আমাদের মধ্যে একজন মহাপাপী আছে, তাহার মাথায় বাজ ফেলিয়া মেঘটা তাহাকে মারিতে আসিয়াছে।” আর একজন বলিল, ‘একজন দোষীকে মারিতে গিয়া তাহার সঙ্গে এতগুলি নির্দোষীকে বধ করিবে, বোধহয় এইজন্যই বাজ পড়িতে দেরি হইতেছে। কিন্তু দেরি আর কতক্ষণ হইবে, দোষী ব্যক্তি যদি শীঘ্র পৃথক হইয়া না যায় তবে আর সকলেও তাহার সঙ্গে মারা যাইবে।” আর-একজন বলিল, ইহা কখনই হইতে পারেনা, চল আমরা প্রত্যেকেই এক-একবার করিয়া বাহিরে যাই। যে দোষী সে বাহিরে গেলেই তার ঘাড়ে বাজ পড়িবে। এই পরামর্শ বেশ সঙ্গত বোধ হইল তারপর এক-একজন করিয়া বাহিরে যাইয়া ফিরিয়া আসিতে লাগিল। এইরূপে একজন ছাড়া আর সকলেই বাহিরে গিয়া আসিল, কিন্তু তাহদের কাহারো মাথায় বাজ পড়িল না। শেষ, ব্যক্তির পালা যখন আসিল তখন সে আর কোনমতেই বাহিরে যাইতে চাহে না। অন্যান্যেরা মনে করিল, ‘এই ব্যক্তিই দোষী, ইহাকে ঘর ছাড়িয়া যাইতে হইবে, নতুবা ইহার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও মারা পড়িব।’