পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৪৫


পাইলে, আর মেঘ বলিয়া ডাকিলে। যখন আমরা পড়িতে লাগিলাম, তখন তোমরা বলিলে ‘বৃষ্টি হইতেছে’। আমাদের কেহ কেহ তোমাদের পুকুরে পড়িলাম। কেহ কেহ অন্য স্থানে পড়িয়াও শেষে কেমন করিয়া পুকুরেই আসিল। আর সকলের কি হইল বলিতে পারি না—’

 এমন সময় খোকার পাতে সন্দেশ পড়িল। খোকা অমনি সব ভুলিয়া গিয়া সন্দেশ লইয়া ব্যস্ত হইল। ইহা নিতান্তই দুঃখের বিষয়। খোকার লোভ একটু কম হইলে আমরা জলকণাদের নিকট আরো কত গল্প শুনিতে পাইতাম৷


দাসত্বপ্রথাঃ ১

 তোমাদের অনেকেই টমকাকার কুটির পড়িয়াছ, এবং দাস-ব্যবসায় সম্বন্ধে অনেক কথা জান। ইউরোপের সভ্য সাহেবগণ আমেরিকায় যাইয়া চিনি, তুলা ইত্যাদির চাষ করিতেন, এবং ইউরোপের বাজারে সেই-সকল জিনিস বিক্রয় করিয়া ধনী হইতেন॥ এই-সকল কারবারে ক্ষেতে খাটিবার জন্য অনেক লোকের দরকার হইত। মাহিয়ানা করিয়া চাকর রাখিতে গেলে বিস্তর পয়সা লাগে, লাভ তত বেশি হয়না, সুতরাং অল্প পয়সায় যাহাতে কাজ চলে, সাহেবরা শীঘ্রই তাহার একটা উপায় স্থির করিলেন৷

 আফ্রিকায় নিগ্রোজাতির বাস। নিগ্রোরা বলিষ্ঠ, কর্মক্ষম, সরল এবং শান্ত স্বভাব। একদল লোক ইহাদিগকে বলপূর্বক ধরিয়া আমেরিকায় আনিয়া বিক্রয় করিতে লাগিল, এইরূপে দাস-ব্যবসায়ের সৃষ্টি হইল। এই-সকল লোকদের উপর কিরূপ পশুর মতন নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হইত, নিম্নলিখিত গল্পটি পড়িলেই তাহা বুঝিতে পরিবে৷

 লাইবেরিয়া একজন নিগ্রো পাদরি আছেন। বাল্যকালে তাঁহাকে দাস ব্যবসায়ীদের হাতে পড়িয়া ভয়ানক কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। তাঁহাকে ধরিবার সময় পাষণ্ডেরা তাঁহার গায়ে যে আঘাত করিয়াছিল, এই বৃদ্ধ বয়সেও তাহার চিহ্নসকল আছে। পাঁচ বৎসর বয়সের সময় তাঁহাকে চুরি করিয়া আনে। তাঁহার পিতা আফ্রিকার ঐস্থানের একজন ধর্মযাজক ছিলেন। একটি ছোট গ্রামের একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কুটিরে তাঁহারা বাস করিতেন। ইহার নিকটেই তাঁহাদের কাঠের ছোট কালো দেবতাটির মন্দির ছিল। রোজ দুবেলা ছেলেদের সেই দেবতার কাছে লইয়া গিয়া হাতজোড় করিয়া পূজা করিতে শিখাইতেন। এইরূপ নির্দোষ সুখে তাঁহাদের জীবন চলিত, ভবিষ্যতের দারুণ দুঃখের কথা তাঁহারা স্বপ্নেও জানিতে পারেন নাই৷

 এই গ্রামের নিকটেই আর-একদল নিগ্রো বাস করিত। ইহারা টাকার লোভে পর্টুগীজ দাস-ব্যবসায়ীদিগকে এই গ্রামে পথ দেখাইয়া আনিল। এক-দিন রাত্রিতে সকলে নিশ্চিন্ত মনে নিদ্রা যাইতেছে, এমন সময় একদল সশস্ত্র লোক গ্রামে প্রবেশ করিয়া যতজনকে ধরিতে পারিল, বন্ধন করিল। মৃত লোককে বিক্রি করা যাইবে না, সুতরাং অধিক লোককে মারা হইল না৷

 পিতা তিনটি সস্তানকে লইয়া সময় থাকিতেই জঙ্গলে পালাইতে পারিয়াছিলেন। মাতা কনিষ্ঠ শিশুটিকে লইয়া গ্রামান্তরে কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় লইলেন। পনেরো দিবস তাঁহারা সেই স্থানে ছিলেন, এই সময়ের মধ্যে আত্মীয়েরা অবশিষ্ট তিনটি সস্তান এবং তাঁহাদের পিতার সন্ধান লইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তাঁহাদের কোনোরূপ খবরই

উপেন্দ্র—১১৯