পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৪৭

হালকা করিবার জন্য পিপায় পুরিয়া নিগ্রোদিগকে সমুদ্রে ফেলিয়া দিতে লাগিল।

 ইহা দেখিয়া ইংরাজদের জাহাজ অধিকতর বেগে অগ্রসর হইতে লাগিল, এবং শীঘ্রই দাস-ব্যবসায়ীদিগকে ধরিয়া ফেলিল। কিছুকাল ভয়ানক যুদ্ধের পর পর্তুগীজেরা পরাজিত হইল, জাহাজ ইংরেজদের হস্তগত হইল, দাসদিগকে উপরে আনিয়া খাইতে দেওয়া হহল এবং তাহারা সেইখানেই থাকিতে পাইল। এরপর জাহাজ লাইবেরিয়ার দিকে চলিল দেখিয়া; বেচারা নিগ্রোদের মনে আনন্দ হইল।

 লাইবেরিয়াতে আনিয়া তাহাদিগকে নানা স্থানে পাঠাইয়া যাহাতে তাহাদের জীবিকা উপার্জনের পন্থা হয় তাহার চেষ্টা হইতে লাগিল। আমাদের পরিচিত নিরাশ্রয় মাতৃহীন শিশুটিকে এবং অন্যান্য অনেক শিশুকে মিশনারিদের ইস্কুলে ভর্তি করিয়া দেওয়া হইল। এইখানে থাকিয়া তিনি লেখাপড়া শিখিতে লাগিলেন। মিশনারিরা মাঝে মাঝে তাহাকে উপশিক্ষকের কাজ করিতে দিতেন, তাহাতে তাঁহার বিশেষ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাইয়া, সন্তুষ্ট হইয়া একটি স্কুলমাস্টারিতে তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন। এই সময়ে ইহাকে খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করিয়া জনসাউথ নাম দেয়া হয়। জনসাউথ অনেকদিন এই কার্যে ছিলেন, শেষটা তাঁহাকে প্রচারকের পদে নিযুক্ত করা হইল। এই কার্যে তিনি বিশেষরূপে লোকের শ্রদ্ধা ও ভালোবাস আকর্ষণ করিয়াছেন।

 দাসদিগের দুঃখের কথা বলিয়া শেষ করা যায় না। পথে কিরূপ ক্লেশ সহ্য করিতে হইত তাহাই বলিয়াছি। এরপর যাহারা তাহাদিগকে কিনিত, তাহাদিগের নিকট আরো অত্যাচার সহ্য করিতে হইত। সমস্ত দিন ক্রমাগত খাটিতে হইত। সে যে কি ভয়ানক খাটনি তাহা আর কি বলিব! এত খাটিয়াও প্রভুর সন্তোষ নাই, অল্প কাজ হইয়াছে বলিয়া বেত্রাঘাত হইত। সামান্য একটু অবাধ্যতা হইলে তাহাকে মারিয়া তাহার হাড় ভাঙ্গিয়া দেওয়া হইত যাহারা টমকাকার কুটির পড়িয়াছ তাহার জান টমের মতন একজন ভালো লোককেও অকারণ এইরূপ প্রহারে একটা পশুর মতন লোকের হাতে প্রাণ হারাইতে হইয়াছিল। অনেক হতভাগ্য পলাইয়া এই পাশব অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইবার চেষ্টা করিত। দেশের এরূপ আইন ছিল যে এই সকল লোকদিগকে যে আশ্রয় দিবে তাহারই শাস্তি হইবে। পলাতক দাস যদি একবার ধরা পড়িত তবে আর তাহার যাতনার সীমা থাকিত না। এই সকল লোককে প্রথমে দাস-ব্যবসায় উঠিয়া যায়। আমেরিকার উত্তরে ইংরাজাধিকৃত কানাডা দেশ, পলাতক তাহারা জানিত যে ধ্রুবতারা সকল সময়েই উত্তর দিকে থাকে, সুতরাং এই তারার দিকে গেলেই উত্তরের সেই কানাডা দেশে যাওয়া যাইবে। এইরূপে রাত্রিতে ধ্রুবতারা লক্ষ্য করিয়া ক্রমাগত উত্তর দিকে আসিতে আসিতে অনেকে শেষে কানাডায় আসিয়া স্বাধীনতা লাভ করিয়াছে। কতজন জঙ্গলে বন্য জন্তুর গ্রাসে প্রাণ হারাইয়াছে। এইরূপ একজন পলাতক দাস এখন কানাডা দেশের একজন সম্মানিত লোক। তিনি পলাইয়া আসিবার সময় কিরূপে সাপের হাতে পড়িয়া রক্ষা পাইয়াছিলেন তাহা বলিয়াছেন।

 'আমি তাড়াতাড়ি লাফাইয়া একটা গর্ত পার হইবার সময় একটা কোমল পিছল জিনিসের উপর পড়িয়া আছাড় খাইলাম। আমি উঠিতে না উঠিতেই একটা কি যেন আমাকে জড়াইয়া