পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ধরিতে লাগিল। আমি বুঝিতে পারিলাম আমাকে সাপে ধরিয়াছে। আমাকে এমন আঁটিয়া ধরিয়াছে যে আমি দুই হাতে মাথা ঢাকিয়া ছিলাম ভয়ে ও কষ্টে নিজের অবস্থা বুঝিবার শক্তি ছিল না। ক্রমে আমরা পাঁজরা ভাঙ্গিবার উপক্রম হইল। আমি প্রাণের আশা পরিত্যাগ করিয়াছি, এমন সময় আমার বন্ধুদিগের শব্দ শুনিতে পাইলাম। তাঁহাদের একজন কাটারি দিয়া সাপের গলা কাটিয়া ফেলিলেন, কিন্তু তবু তাহার শরীরটা আমাকে পূর্বের ন্যায়ই আঁটিয়া ধরিয়া থাকিল। এমন সময় আমার বন্ধুরা ল্যাজের দিকে প্রায় দুই ফিট কাটিয়া ফেলিলেন। আমি তৎক্ষণাৎ বন্ধন মুক্ত হইলাম, কিন্তু তখন আর উঠিবার, কি কথা বলিবার শক্তি নাই। সুখের বিষয় জল নিকটেই ছিল, আমি শীঘ্রই সুস্থ হইলাম। আমরা যতদূর বুঝিতে পারিলাম, অজগরটা ষোলো ফুট লম্বা হইবে এবং তাহার শরীরের খুব মোটা জায়গাটা একজন বলিষ্ট লোকের ঠ্যাঙের মতন মোটা। সাপটা বিষধর ছিল না, কিন্তু আমার এক হাতে এমন দুই-একটি আঁচড় দিয়াছিল যে, অনেক বৎসর পর্যন্ত তাহার দাগ যায় নাই। অনেকদিন পর্যন্ত সাপ দেখিলে, এমন-কি, সাপের নাম শুনিলেই আমার গা শিহরিয়া উঠিত। অনেকদিন পর্যন্ত আমি ঘুমের ভিতরে মাঝে মাঝে চীৎকার কবিয়া উঠিতাম। আজ পর্যন্তও আমার সেদিনকার ভয়টা দূর হয় নাই৷

 দাসত্বপ্রথা আমেরিকা হইতে উঠাইয়া দিতে অনেকদিন লাগিয়াছিল। অনেক মহৎলোকের বহু দিনব্যাপী চেষ্টার পর দাসত্বপ্রথা রহিত করিবার আইন হইল। কিন্তু যাহারা দাসদিগকে খাটাইত তাহারা এ আইন কিছুতেই মানিতে চাহিল না। অবশেষে তাহারা বিদ্রোহী হইয়া, ভয়ানক যুদ্ধ করিল। অনেক লোকের প্রাণনাশের পর, সাধু লোকদেরই জয় হইল। দাসগণ স্বাধীনতা পাইল। ইহার কিছুদিন পরেই দাস-ব্যবসায়ীদের একজন লোক আমেরিকার সভাপতি লিংকন্‌কে হত্যা করিল। লিংকন্ পূর্বেই জানিতে পারিয়াছিলেন, দাসব্যবসায়ীগণ বিনামী চিঠি লিখিয়াছিল যে, দাসত্বপ্রথা উঠাইয়া দিলে তাঁহার প্রাণ যাইবে। কিন্তু লিংকনের ন্যায় মহৎলোক অতি অল্পই জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি এই সকল চিঠি একটা পুলিন্দায় রাখিয়া দিতেন, সেই পুলিন্দার উপরে লেখা ছিল, ‘খুনের চিঠি’। কিন্তু সেই-সকল চিঠির ভয়ের প্রতি কিছুমাত্র মনোযোগ না দিয়া, তিনি নির্ভয়ে দাসত্বপ্রথা উঠাইয়া দিলেন। এইজন্য একটা দুর্বৃত্ত থিয়েটাবের ভিতর তাহাকে খুন করিল। দাসগণ যখন লিংকনের মৃত্যু-সংবাদ শুনিল তখন তাহারা পাগলের ন্যায় রাস্তায় ছুটাছুটি করিতে লাগিল। জীবিতাবস্থায় যখনই দাসগণ তাঁহাকে দেখিতে পাইত তখনই দু হাতে সেলাম করিয়া নৃত্য করিত আর বলিত, ‘ধন্যা পরমেশ্বর! ধন্য পরমেশ্বর! প্রভু লিংকাম!’ লিংকন্ শব্দ নিগ্রোরা উচ্চারণ করিতে না পারিয়া ‘লিংকাম’ বলিত। অনেক নিগ্রোর বিশ্বাস হইয়াছিল যে, লিংকন্ পরমেশ্বর। একবার একজন নিগ্রো ধর্মযাজক তাঁহার শিষ্যদিগকে বুঝাইয়া দিয়াছিলেন—‘হে ভাইসকল, প্রভু লিংকাম্ তিনি সকল স্থানেই আছেন, প্রভু লিংকাম্ আমরা যাহা বলি সবই শোনেন, প্রভু লিংকাম্ আমাদের মনের কথা সব জানেন৷’

 দক্ষিণ আমেরিকায় এতদিন দাসত্বপ্রথা ছিল, কিছুদিন হইল তাহাও উঠিয়া গিয়াছে৷

 এতক্ষণ অন্যান্য দেশে অতীতকালে যাহা ঘটিয়াছে তাহাই বলিয়াছি। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমান কালেই ছোটখাটো রকমে সেই-সকল ব্যাপার ঘটিতেছে। আসামে অনেক সাহেবের ‘চা’র চাষ আছে। চা-ক্ষেত্রে কাজ করিবার জন্য অনেক কুলির প্রয়োজন হয়। এই-সকল কুলির