পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

আকাশের কথা : ১

 অন্ধকার রাত্রিতে যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহা হইলে তারাগুলি বড় সুন্দর দেখায়। তখন ছাতে বসিয়া আকাশের পানে তাকাইয়া থাকিতে বেশ লাগে। তারাগুলি কেমন মিট্‌মিট‌্ করে, দেখিয়াছ? দু-একজন হাসি-খুশি লোক আছে, তাহাদের যত হাসি সব চোখ দুটির ভিতরে। তারাগুলিকে দেখিলে আমার ঐরূপ লোকের চোখের কথা মনে হয়। বোধ হয়, যেন আমাকে দেখিয়া তাহাদের বড়ই হাসি পাইয়াছে।

 বাস্তবিক, উহাদিগকে দেখিয়া আমরা যেমন আশ্চর্য হই, তাহা জানিতে পারিলে উহারা নিশ্চয়ই হাসিয়া ফেলিত। সেই কবে পৃথিবীতে প্রথম মানুষ জন্মিয়ছিল, আর আজ এই উনিশ শত সালের জুলাই মাস। এতদিন ধরিয়া ক্রমাগত তাহাদিগকে দেখিতেছে, তথাপি মানুষের দেখিবার সাধ মিটে নাই, বরং ক্রমাগত বাড়িয়াই চলিয়াছে। লোকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করিয়া দূরবীন তয়ের করে, সারারাত জাগিয়া সেই দূরবীন দিয়া আকাশ দেখে। যাহারা এরূপ করে, তাহার নিতান্ত ছেলেমানুষ নয়। অঙ্কশাস্ত্রে তাহাদের মতো বড় পণ্ডিত খুব কমই আছে।

 আজকাল ভালো-ভালো দূরবীন এবং অন্যান্য অনেকরকম যন্ত্র হইয়াছে। আগে এ-সব ছিল না। তখন শুধু চোখে যাহা দেখা যাইত, তাহাতেই লোকে সন্তুষ্ট থাকিত। দেখিতে জানিলে শুধু চোখেই কি কম দেখা যায়? আমরা শুধু চোখে আকাশের যাহা দেখিতে পাই, তাহা কম আশ্চর্য নহে। রোজ দেখিয়া সেগুলি আমাদের কাছে পুরাতন হইয়া গিয়াছে, কাজেই আমরা তাহাদিগকে তেমন আশ্চর্য মনে করি না। চন্দ্র, সূর্য, তারা এ-সকল যদি কিছুই আগে না থাকিত, আর তারপর একদিন হঠাৎ আসিয়া দেখা দিত, তাহা হইলে নিশ্চয়ই খাবার ফেলিয়া ছুটিয়া দেখিতে আসিতাম।

 তোমাদের সকলে ধুমকেতু দেখ নাই, কিন্তু ধূমকেতুর কথা অনেক শুনিয়াছ। আচ্ছা, বল দেখি ভাই, একটা ধূমকেতু দেখিবার জন্য তোমাদের মনটা ব্যস্ত হইয়া আছে কিনা? কিন্তু ধূমকেতু যদি রোজ উঠিত, তবে তাহার এত খবর কেহ লইত কি না সন্দেহ।’

 যাহা রোজ ঘটিতেছে, তাহাও অতিশয় আশ্চর্য। এই যে আমরা পৃথিবীর পিঠে চড়িয়া ঘুরপাক খাইতে খাইতে শূন্যে ছুটিয়া চলিয়াছি, বলিতে গেলে এটাই কি একটা কম আশ্চর্যের ব্যাপার? আমাদের পৃথিবী ঘুরিতে ঘুরিতে বৎসরে একবার সূর্যের চারিদিক বেড়াইয়া আইসে। সূর্যটা যদি এক জায়গায় স্থির হইয়া বসিয়া থাকিত, আর পৃথিবী তাহার চারিদিকে ঘুরিত, তবে পৃথিবীর পরিশ্রম একটু কম হইত। কিন্তু এ জগতে কাহারও স্থির হইয়া বসিয়া থাকিবার হুকুম নাই। সুতরাং সূর্য ও পৃথিবীকে লইয়া নিজে ঘুরিতে ঘুরিতে আকাশের একদিক পানে ছুটিয়া চলিয়াছে।

 পৃথিবীর চারিধারে চন্দ্র ঘোরে, চন্দ্রকে লইয়া পৃথিবী সূর্যের চারিধারে ঘোরে, আবার চন্দ্রসুদ্ধ পৃথিবীকে লইয়া সূর্য কোথায় চলিয়াছে। শেষে গিয়া সে কোথায় ঠেকিবে। আর এই আকাশটাই কত বড় যে, এতদিন ছুটয়াও সূর্য তাহার শেষ পাইল না। একটা তারার দিকে সূর্য ছুটিয়া চলিয়াছে। কিন্তু সেই তারাটা দুশো বৎসর আগে যত দূরে দেখাইত, এখনও তত দূরেই দেখায়। সেই তারাটাই বা কত দূরে যে, এতকাল ছুটিয়াও সূর্য তাহার কিছুমাত্র কাছে পৌঁছতে পারিল না। সূর্য এত দূরে থাকিলে আমরা তাহাকে দেখিতে