পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৬৩

পাইতাম কি না সন্দেহ। সেই তারাটা বোধ হয় সূর্যের চাইতেও অনেকখানি বড় আর উজ্জ্বল। সেটা খুব বড় সূর্য, আমাদের এটি একটি ছোট সূর্য।

 ঐ তারাগুলি কি তবে সকলেই সূর্য? সূর্যের মতন বড় আর জমকালো না হইলে এত দূরে তাহাদিগকে দেখাই যাইত না। উহারা সকলেই সূর্য। আমাদের সূর্যের চারিধারে যেমন পৃথিবী, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শনি, প্রভৃতি গ্রহ ঘোরে, উহাদের চারিধারেও হয়তো তেমনি অনেক গ্রহ ঘোরে, কিন্তু এত দূরে থাকিয়া সে-সকল গ্রহকে দেখিবার আমাদের কোনো উপায় নাই। যাহা হউক, এইটুকু দেখা গিয়াছে যে, ঐ-সকল সূর্যের কোনো কোনোটার চারিধারে আর-একটা সূর্য ঘুরিতেছে। এমন প্রমাণও পাওয়া গিয়াছে যে, ঐ-সকল তারার কোনো কোনোটার এমন এক-একটি সঙ্গী আছে যে, তাহাদের নিজেদের আলো নাই। নিজেদের আলো নাই বলিয়া তাহারা আমাদিগকে দেখা দিতে পারিতেছে না, কিন্তু অন্য উপায়ে আমরা জানিতে পারিয়াছি যে, তাহারা আছে। উহাদের নিজেদের আলো নাই সুতরাং উহারা সূর্য নহে, গ্রহ, অর্থাৎ, আমাদের পৃথিবী যাহা, তাহাই। আমাদের এই ছোটখাটো সূর্যের সঙ্গে এতগুলি গ্রহ, ঐ-সকল বড়-বড় সূর্যের সঙ্গে গ্রহ নাই? এটা একটা কথাই নহে!

 আমরা নিতান্তই ছোট, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস যে আমরা খুব বড়। আমরা ভাবি, আমরা যে মানুষ! আহা, আমাদের মতন আর-একটি জন্তু বুঝি হয় না! আমাদের যে পৃথিবী ইস্! সে কতখানি বড়!’ কিন্তু আমরা যে যথার্থই কত ছোট, তাহা বুঝাইয়া দিবার জন্য ঈশ্বর আকাশকে রাখিয়াছেন। দেখ, ওখানে কত সূর্য। ঐ-সকল সূর্যের সঙ্গে কত পৃথিবী আছে। আর, তাহাতে মানুষের মতন, বা, তাহার চাইতে ঢের বেশি বুদ্ধিমান জীব থাকা কোনমতেই অসম্ভব নহে। উহারা হয়তো আমাদের চাইতে ঢের বেশি কথা জানে, আর এখানকার দূরবীনের চাইতে অনেক বড়-বড় দূরবীন দিয়া আকাশ দেখে। কিন্তু আমাদের খবর কি তাহারা পাইয়াছে? তাহার ভরসা নিতান্তই কম বলিতে হইবে। উহাদের মধ্যে যাহারা আমাদের একটু কাছে থাকে, তাহা হয়তো আমাদের সূর্যকে একটি ছোট তারার মতো দেখিতে পায়। কিন্তু ইহার বেশি দেখা সম্ভব নহে। পৃথিবী, চন্দ্র, বুধ, বৃহস্পতির কথা তাহারা কিছুই জানে না।

 আর মানুষ? হায় হায়, আমাদের কথাও তাহারা জানে না। কোনোদিন যে জানিবে তাহারও আশা নাই। ডাকিলে তো উহারা শুনিবেই না। পৃথিবীর সকল মানুষ জুটিয়া চ্যাঁচাইলেও শুনিবে না। চিঠি লিখিয়াও জানাইবার উপায় নাই। চিঠি কে লইয়া যাইবে? কোন পথে যাইবে? আর যদিই বা লোক মিলে আর পথ হয়, তবে সে চিঠি কয় দিনে পৌঁছাইবে? তোমার চিঠিওয়ালা যদি রেলে চড়িয়া ঘণ্টায় ষাট মাইল করিয়া যায়, তাহা হইলেও সকলের চাইতে কাছের তারাটিতে সে সাড়ে চার কোটি বৎসরের কমে পৌঁছাইতে পারিবে না! সেই চিঠির জবাব আসিতে আর সাড়ে চার কোটি বৎসর লাগিবে!

 সকলের চাইতে নিকটের তারাটির সম্বন্ধে যদি এমন হয়, তবে দূরের তারাগুলির কথা কি বলিবে! চক্ষে যাহাদিগকে দেখিতে পাই, তাহারা যে আমাদের কাছে, মোটের উপরে এ কথা মানিয়া লওয়া যায়। কিন্তু এই কাছে তারাগুলিও কত দূরে, তাহা উপরের ঐ দৃষ্টান্তটির দ্বারাই বুঝিতে পার। বাস্তবিকই উহারা এত দূরে যে, সকলের চাইতে বড় দূরবীন দিয়াও উহাদিগকে আমরা কিছুমাত্র বড় দেখিতে পাই না। শুধু চোখে যেমন একটা কিছু মিট মিট্