পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৭৫

দূরবীন সে সময়ে আর কেহই প্রস্তুত করিতে পারিত না। কি ভয়ানক খাটুনিই তাহার খাটিতে হইয়াছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলিয়া যাইত, স্নান নাই, আহার নাই, —হর্শেল ক্রমাগত বসিয়া আরশিই পালিশ করিতেন। তাঁহার ভগিনী ক্যারোলীন সর্বদা তাহার কাছে থাকিয়া ক্ষুধার সময় মুখে খাবার তুলিয়া দিতেন, আর অতিরিক্ত পরিশ্রমের ক্লেশ কমাইবার জন্য তাহাকে আরব্য-উপন্যাস পড়িয়া শুনাইতেন।

 এইরূপ পরিশ্রম করিয়া হর্শেল দূরবীক্ষণ তয়ের করিয়াছিলেন। একটি নয়, দুটি নয়, অনেকগুলি। রাজারা অবধি তাহার তৈয়ারি দূরবীক্ষণ পাইলে যারপরনাই খুশি হইতেন। তখনকার দূরবীক্ষণগুলির মধ্যে হর্শেলের তৈয়ারি কয়েকটা দূরবীক্ষণই সকলের চাইতে বড় ছিল।

 হর্শেল ক্রমে ওস্তাদী ব্যবসায় ছাড়িয়া দিয়া দূরবীক্ষণ নির্মাণ এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চা লইয়াই দিন কাটাইতে লাগিলেন। কালে তিনি একজন প্রধান জ্যোতির্বেত্ত হইয়াছিলেন। যাহা হউক, তাহার সকলের অপেক্ষা বড় কাজ দূরবীক্ষণ-নির্মান নহে—তাহ ইউরেনস গ্রহের আবিষ্কার। বাস্তবিক জ্যোতির্বেত্তা বলিয়াই হর্শেলের অধিক খ্যাতি। তবে, আমরা নাকি এখন দূরবীক্ষণের কথা লইয়াই একটু ব্যস্ত আছি, সুতরাং অন্য বিষয়ের কথা এখন না পাড়াই ভালো।

 হর্শেল অনেক দূরবীন প্রস্তুত করিয়াছিলেন, তাহার বড়খানির আরশিটি চার ফুট চওড়া ছিল। ইহার পরে লর্ড রস এর চাইতেও বড় একটা দূরবীন প্রস্তুত করেন, তাহার আরশিখানি ছয় ফুট চওড়া। এত বড় কাচওয়ালা দূরবীন এপর্যন্ত কেহ প্রস্তুত করিতে পারে নাই। সকলের অপেক্ষা বড় কাচওয়ালা দূরবীক্ষণের কাচ পঞ্চাশ ইঞ্চি চওড়া,গত প্যারী প্রদর্শনীতে এই দূরবীক্ষণটি দেখানো হইয়াছিল।

 তোমরা অনেকেই দূরবীন দেখিয়াছ। একটা নল, তাহার দুমাথায় কাচ পরানো—দূরবীনের চেহারা মোটামুটি এইরূপ। একদিকের কাচ বেশ বড় ইহা দ্বারা দূরবীনের নলের ভিতরে দেখিবার জিনিসের ছবি তৈয়ার হয়। অন্য দিকের কাচ ছোট, ইহাতে সেই ছবিখানিকে খুব বড় করিয়া দেখায়। বড় দেখাইলেই আমাদের বোধ হয় যেন জিনিসটাকে কাছে দেখিতেছি।

 বড় কাচখানির ইংরাজি নাম (অবজেক্ট গ্লাস) object glass অর্থাৎ জিনিসের কাচ। যে জিনিসটাকে দেখিতে যাইতেছ, এই কাচখানিকে তাহার পানে ফিরাইয়া ধরিতে হয়, এইজন্যই উহার নাম জিনিসের কাচ। আর ছোট কাচের পিছনে চোখ রাখিয়া তাকাইয়া দেখিতে হয়, এইজন্য উহার নাম (আই পীস) eye piece অর্থাৎ চোখের কাচ। এক কথা, আমার কথা শুনিয়া হয়তো বোধ হইতে পারে যে object glassটি বুঝি একখানি কাচ, কিন্তু বাস্তবিক তাহা নহে। একখানি কাচ দিয়া object glass তৈয়ার করিলে তাহাতে জিনিসের চারি ধারে রামধনুর মতন রঙ দেখা যায়। সুতবাং এই দোষ দূর করিবার জন্য দুরকমের দুখানি কাচ দিয়া object glass প্রস্তুত করা হয়। অবশ্য যেমন তেমন দুখানি কাচ লইলেই তাহা দ্বারা অবজেক্ট গ্লাস প্রস্তুত করা যায় না,ইহার একটা হিসাব আছে। কিন্তু সেই হিসাবটা নাকি একটু কঠিন, সুতরাং এখানে তাহার চর্চা হইতে পারে না।

 আইপীসও সচরাচর একখানি কাচের হয় না। একখানি কাচের আইপীস্ দিয়া একেবারেই কাজ চলে না এমন নহে অবজেক্ট গ্লাস ভালো হইলে, একখানি কাচের আইপীস্ দিয়াও বেশ পরিষ্কার দেখা যায়। কিন্তু যাহা দেখা যায় তাহা সবই উলটা। ঐরাপ আই পীসের