পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯৯৫

তাহাতে আর ভুল কি? দুটা একটা তিমি যে বঙ্গোপসাগরে না দেখা যায় এমন নহে; তাহার প্রমাণ তো জাদুঘরে গেলেই দেখা যায়। কিন্তু আমি এখানে পুঁথি খুলিয়া গল্প ফাঁদিতে বসি নাই, যাহা দেখিয়াছি, তাহাই বলিতে যাইতেছি, সুতরাং ‘সমুদ্রের সাপ’ (Sea Serpent) তিমি প্রভৃতির কথা বলার অবসর আমার হইবে না। আমি যে সমুদ্রের সাপ দেখিয়াছি, তাহা সাড়ে তিন হাতের অধিক লম্বা হইবে না। দেখিতে কতকটা ঢোঁরা সাপের মতো। গায়ে ডুমোডুমো দাগ আছে, লাজটা চ্যাটাল। এইরূপ একটা সাপ সমুদ্রের ধারে মরিয়া পড়িয়ছিল। সমুদ্রের সাপগুলির ল্যাজ প্রায়ই চ্যাটাল হয়, তাহাতে সাঁতরাইবার খুব সুবিধা। যা হউক আমি মাছের কথাই এখন বলিব। তবে মাছ শব্দটা এখানে একটু খোলাভাবেই ব্যবহার হইতেছে। এরূপ অনেক জানোয়ার যে তাহদের চৌদ্দ পুরুষের কেহ মাছের ধার ধারে নাই, অথচ তাহারা মাছ। যেমন জেলী মাছ, চিংড়ি মাছ, কট্‌ল মাছ ইত্যাদি। ইহাদের কেহ শামুক, কেহ পোকা, আর কেহ যে কি তাহা এক কথায় বলা ভারি মুশকিল। যাহা হউক লোকে উহাদিগকে মাছই বলে, সুতরাং আমিও তাহাই সুবিধাজনক মনে করিতেছি।

 সমুদ্রের মাছ হইলেই যে আমাদের দেশী মাছের চাইতে অনেক ভিন্ন হইবে এমন কোনো কথা নাই। তাহার প্রমাণ এই যে, ইলিশ মাছ সমুদ্রেরই মাছ, সেখান হইতে নদীর ভিতর দিয়া এখানে আইসে। চাঁদা মাছ, ফ্যাসা মাছ চ্যালা মাছ ইত্যাদি সমুদ্রে বিস্তর আছে। বাস্তবিক এইরূপ ঝকঝকে রুপোলি রঙের মাছই সেখানে বেশী দেখিলাম। এইসকল মাছ এক এক দিন জাল বোঝাই হইয়া উঠিতে দেখিয়াছি। রুই, কাতলা জাতীয় মাছ দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না।

 যত মাছ দেখিয়াছি দুঃখের বিষয় তাহার সবকটার নাম শিখিয়া আসিতে পারি নাই। চ্যালার নাম ‘খণ্ড বানিয়া’, তাহার এক একটা প্রায় এক ফুট লম্বা হয়। খাইতে নেহাত মন্দ নহে, কিন্তু বাপ রে! তাহাতে কাঁটা, কি কাঁটা! ‘কো-কি-র’ খয়রা মাছের মতন। পিঠের রঙ কালচে। খাইতে বেশ। ‘চাঁদি’ হচ্ছে চাঁদা। ইহা সমুদ্রের এক উৎকৃষ্ট মাছ। চাঁদির অনেক প্রকার ভেদ আছে। ছোট, বড়, সাদা, পাশুটে সকলরকম চাদিই খাইতে ভালো, তবে বড়গুলিরই প্রশংসা বেশি। একরকম ছোট-ছেট চাঁদি আছে, সে যে দেখিতে কি সুন্দর তাহা কি বলিব! রঙটি যেন ঠিক মুক্তার মতন, আর দেখিতে এত কোমল এবং পরিষ্কার যে মনে হয়, যেন তাহাকে অমনি খাওয়া যাইবে। উহার ঝোল চমৎকার লাগিত। সমুদ্রের বেলে মাছের নাম ‘মেইলা’। ইহার গায়ের চেহারা বেলের মতো,ইহার পেটের ভিতরটি পরিষ্কার, কিন্তু মুখ চল আর দাড়ি গোফ একেবারেই নাই। ‘বেদ’ মাছ বলিয়া আর একটা মাছ আছে, দাড়ি গোঁফ আর চেহারার জাকজমকে সে বেলে মাছকে পরাস্ত করিয়াছে। উজ্জ্বল হলদে রঙের পরিপাটিতে কালো কালো দাগ; দেখিতে খুব জমকাল—আরো বড় হইলে (লম্বায় দশ ইঞ্চি আন্দাজ হইবে) ভয়ঙ্কর বলা যাইত। এ মাছ কেহ খায় না। জেলেরা উহাকে ধরিয়া ফেলিয়া দেয়। আর একটা অখাদ্য মাছের নাম ‘বে-ঙ’ মাছ। এ মাছ খুব ছোট ট্যাংরা মাছের মতন। মুখের চেহারা অনেকটা ব্যাঙের মতন। চোখ উঁচু-উঁচু, রঙ হলদে, অন্ধকার রাত্রিতে নাকি এ মাছ ঝক্‌ঝক্ করে, আর ইহা খাইলে নাকি অসুখ করে। তারপর শিরোমুণ্ডী মাছ। আমাদের চাকর বলিয়াছিল ‘রসমুণ্ডী’। তাহা শুনিয়া তোমরা হয়তো ভাবিতেছ মাছটা খাইতে বুঝি বড়ই সুস্বাদ। স্বাদের কথা বলিতে পারি না, কিন্তু তাহার গন্ধের কিঞ্চিৎ পরিচয় পাইয়াছি। সে কিরূপ পরিচয় তাহা এ কথা বলিলেই বুঝিতে পারবে যে ঐ মাছ কুটিয়া যে ঘটি লইয়া হাত ধুইয়াছিল, সে