পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৯৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 সেবারে আমি সবে কট্‌ল্ ফিশের কথা পড়িয়াছিলাম, আর বলিয়াছিলাম, উহাতে ঔষধ হয়। ঐ হাড়ের গুঁড়া পালিসের কাজে লাগে; অনেকে উহা দিয়া দাঁত মাজে।

 জাত বিশেষে কট্‌ল্ ফিশ এক একটা খুব বড় বড়ও হয়, কিন্তু আমি নিতান্ত ছোট-ছোটই দেখিয়াছি। উহাদের অবশ্য কোনোরকম দেশী নাম আছে; দুঃখের বিষয় আমি তাহা জানি না। একটি জেলের ছেলে চার পাঁচটা কট্‌ল্ ফিশ হাতে করিয়া সমুদ্রের ধারে দাঁড়াইয়াছিল, তাহা দেখিয়া আমি উহার সহিত কথাবার্তা আরম্ভ করিলাম। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘ওগুলো কি?’ উদ্দেশ্য, নামটা শিখিয়া লই। ছেলেটি বড় ভীতু, কেমন জড়সড় হইয়া উত্তর দিল। তাহাতে নাম যদি বলিয়াও থাকে, আমি তাহার কিছুই বুঝিতে পারি নাই। আমি খালি এই কথাটা একটু বুঝিলাম, যে সে তাহা দিয়া ‘তরকারি পাকাইবে’। সবে আমার এইটুকু জ্ঞানলাভ হইয়াছে, আরো ঢের হইবে বলিয়া আশা করিতেছি, এমন সময় কোথা হইতে এক সাহেব আসিয়া আমার সব গোলমাল করিয়া দিল। সে বলে, ওটা নিতান্ত নিম্নশ্রেণীর মাছ। আমি বলিলাম ওটা মাছ নয়, শামুক জাতীয় জন্তু। সাহেব আমার সে কথায় আমলই দিল না। ততক্ষণে সেই ছোকরা কোথায় যে সরিয়া পড়িল, আর তাহাকে দেখিতে পাইলাম না।

 সেই কট্‌ল্ মাছগুলিকে দেখিয়া আমার ছোট-ছোট শুকনো কচুগাছের কথা মনে হইয়াছিল। শরীরগুলি যেন মুখী কচু (রঙ কিন্তু ঘোর খয়েরি) আর হাত পা গুলি যেন তাহার শুকনো ডালপালা। এক একটার এইরূপ আটটি কি দশটি করিয়া হাত (অথবা পা, যাই বল) থাকে। আমি যাহা দেখিয়াছি, তাহার কটা হাত ছিল, গুনিবার অবসর পাই নাই; কিন্তু উহার আকৃতি যেরূপ দেখিলাম তাহাতে বোধ হইল, যেন উহার দশ হাত। আর, দুটি হাত যেন অন্যগুলির চাইতে বেশি লম্বা বলিয়া বোধ হইয়াছিল; ইহাও দশ হাতওয়ালা কট্‌ল্‌ ফিশের একটা লক্ষণ। কট্‌ল্‌ ফিশের বড়-বড় উজ্জ্বল দুটো চোখ, আর টিয়া পাখির মতন ঠোঁটও আছে। ঠোঁটটি কিন্তু হাত পায়ের জঙ্গলের ভিতরে লুকানো থাকে বলিয়া দেখিতে পাওয়া যায় না।

 এ জন্তুগুলি যেন সমুদ্রের সঙ। অনেক দেশ ইহাদিগকে ‘শয়তান মাছ’ (devil fish) বলে। বাস্তবিক এমন বিকট বিদ্‌ঘুটে চেহারা আর কোনো জন্তুর আছে কিনা সন্দেহ। চালচলন আবার চেহারার চাইতেও অদ্ভুত। আট দশটা পা থাকিলে তাহার চলাফেরা সম্বন্ধে অন্তত আমাদের সাদাসিধা হিসাবে আর কোনো ভাবনার কথা থাকে না। কিন্তু ইহারা এতগুলি পা লইয়াও সন্তুষ্ট নহে; উহাদের আরো একরকম চলিবার কায়দা চাই। পাগুলি দিয়া পায়ের কাজ আর হাতের কাজ দুইই চলে; অর্থাৎ চলাফেরাও হয় আবার শিকারকে জড়াইয়া ধরাও যায়। সাধারণ চলাফেরার সময় এই পাগুলিই ব্যবহার হয়। কিন্তু পলায়নের সময় এমন পুরাতন পাড়াগেঁয়ে দস্তুর উহারা পছন্দ করে না; তখনকার জন্য একটা কোনোরূপ নূতন কায়দার নিতান্তই দরকার। সুতরাং চম্পট দিবার কাজটি দমকলে না হইলে উহাদের মন উঠে না। দমকলের বন্দোবস্ত বিধাতা উহাদের শরীরের মধ্যেই করিয়া দিয়াছেন; তাহা দ্বারা উহারা ইচ্ছা করিলেই পিচকারির মতন বেগে জল ফুঁকিয়া (অবশ্য মুখে ফুঁকিয়া নয়, সেই কলে ফুঁকিয়া) বাহির করিতে পারে। সে জলের এমনি ধাক্কা যে, সেই ধাক্কায় তীরের মতন বেগে পিছু হটিয়া উহারা তিলার্ধে অর্ধ ক্রোশ দূরে গিয়া উপস্থিত হয়।

 ইহাদের প্রত্যেকের আবার এক থলে করিয়া কালি থাকে। তেমন বেখাপ্পা গোছের