পাতা:উভয় সঙ্কট - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উভয় সঙ্কট।
১১

 কেনারাম দাদা অবাক হইয়া আমার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। আমি কহিলাম, “চল দাদা, শীঘ্র চল—আমরা লাস ফেলিয়া আসিয়াছি।”

 তখন পুনরায় খিড়কী দিয়া আমরা সেই বাড়ীতে প্রবেশ করিলাম। প্রবেশ করিয়াই খিড়কীর দরজা বন্ধ করিয়া দিলাম। তার পর উপরে যে ঘরে লাস পড়িয়াছিল, সেই ঘরে আসিলাম। এইবার কেনারাম দাদা একটু বিশ্রাম করিবার চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন, কিন্তু আমার প্রাণে সে ইচ্ছার লেশমাত্র ছিল না। আমি কেবল এই খুনের কথা ভাবিতে লাগিলাম। যে ব্যক্তি খুন হইয়াছে—সে ব্যক্তিকে একজন সন্ত্রান্ত মুসলমানবংশীয় বলিয়া আমার মনে হইল। আর তাহার পোষাক-পরিচ্ছদ দেখিয়া বুঝিলাম, হয় বাহির হইতে এ বাড়ীতে আসিয়াছিল, না হয়— বাহিরে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইয়াছিল, এমন সময় খুন হইয়াছে বাড়ীর লোকে গৃহে থাকিবার সময় সচরাচর সেরূপ পোষাক পরিয়া থাকে না। আমি এ সকল কথা মনে মনে চিন্তা করিতেছি, এমন সময় একটা কথা হঠাৎ আমার মনে হইল। আমি কেনারাম দাদাকে কহিলাম, “কেনারাম-দা, একখানা কোদাল আনিতে পার?”

 কেনারাম দাদা আশ্চর্য্য হইয়া কহিল, “তুমি কোদাল লইয়া কি করিবে? লাসটা পুঁতিয়া ফেলিবার মৎলব আছে নাকি?”

 কেনারাম দাদার কথা শুনিয়া আমি হাসিলাম। আমার হাসিবার অর্থ এই—কেনারাম দাদা পুলিসের একজন পুরাতন কর্ম্মচারী হইয়া কেমন করিয়া এরূপ কথা কহিলেন। লাস পুঁতিয়া ফেলিবার সম্বন্ধে আমাদের হাত কি থাকিতে পারে?