পাতা:উৎসর্গ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জলে তোমার নাই প্রয়োজন, এমন গ্রীষ্মনিশা?’
আমিও কেঁদে কেঁদে বলি, ‘হে অজ্ঞাতচারী,
তৃষ্ণা যদি হারাও তবু ভুলো না এই বারি।’

হেনকালে হঠাৎ যেন লাগল চোখে ধাঁধা-
চারি দিকে চেয়ে দেখি নাই পাহাড়ের বাধা।
ওই যে আসে কারে দেখি-  আমাদের যে ছিল সে কি!
‘ওগো তুমি কেমন আছ, আছ মনের সুখে?
খোলা আকাশতলে হেথা ঘর কোথা কোন্ মুখে?
নাইকো পাহাড়, কোনোখানে ঝর্না নাহি ঝরে,
তৃষ্ণা পেলে কোথায় যাবে বারিপানের তরে?

সে কহিল, ‘যে ঝর্না বয় সেথা মোদের দ্বারে
নদী হয়ে সেই চলেছে হেথা উদার ধারে।
সেই আকাশ সেই পাহাড় ছেড়ে  অসীম-পানে গেছে বেড়ে,
সেই ধরারেই নাইকো হেথা পাষাণবাঁধা বেঁধে।’
‘সবই আছে, আমরা তো নেই’ কইনু তারে কেঁদে।
সে কহিল করুণ হেসে, ‘আছ হৃদয়মূলে।’
স্বপন ভেঙে চেয়ে দেখি আছি ঝর্নাকূলে।

জোড়াসাঁকো। কলিকাতা ১০ মাঘ ১৩০৯

৯০