পাতা:ঊর্ম্মিমুখর.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘন অন্ধকার। বড় বড় গাছের মাথায় অগণ্য নক্ষত্রদল জলজলু করচে– কি অসীম দ্যুতিলোক পৃথিবীর চারিধার ঘিরে। টর্চের ব্যাটারি ফুরিয়ে এলেচে বলে একরকম অন্ধকারেই চলে আসতে হোল। নিরাপদ সঙ্গে খানিকদূর এল গল্প করতে করতে—রাস্তার ধারে সাকোর ওপর দুজনে কতক্ষণ বললুম। আমি গল্প করি আর একবার মাথার ওপরে চেয়ে চেয়ে নক্ষত্র দেখি, একবার চারিধারের অন্ধকার বনানী দেখি । আজ বিকেলে কুঠার মাঠে গিয়ে একটা চমৎকার স্বৰ্য্যাস্ত লক্ষ্য করলুম। আর সেই বন ঝোপের সুগন্ধ ! এই গন্ধটা আমায় এবার বড় মুগ্ধ করে রেখেচে । এদের ছেড়ে কলকাতা চলে যাবার দিন নিকটবৰ্ত্তী হয়েচে মনে ভাবলেই মনটা খারাপ না হয়ে পারে না, কিন্তু এখানে নানা কারণে কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠচে না—প্রথম কথা, সঙ্গে বই নেই--আমার নোটবইগুলো নেই। এমন কি লেখবার উপযুক্ত খাতা বা কাগজপত্র পর্য্যন্ত বেশী আনি নি। বই ভিন্ন আমি থাকতে পারি নে। বই উপযুক্ত সংখ্যায় না আনা একটা বড় ভুল হয়ে গিয়েচে এ ছুটতে । এমন ভূল আর কখনো হবে না ; দুটে ছোট গল্প লিখেচি—এবারকার পূজোতে তার বেশী কিছু হ’ল না আমাদের পাড়ার সবাই কাল সকালে সাত ভেয়ে কালীতলায় যাবে। অভিলাষের নৌকা বলে ওই পথে অমনি সুইমাদের রান্নাঘরে গিয়ে বসলুম। কতকাল পরে যে ওদের রান্নাঘরে গেলাম ! নলিনীদিদি যত্ন করে বসালে— চা আর খাবার দিলে, তারপর কতকালের এ গল্প ও গল্প, কত ছেলেবেল কথা, নলিনীদি'র বিয়ের সময়কার ঘটনা। ওর স্বামী উত্তর আফ্রিকায় ছিলেন যে সব গল্প । সোনার মেয়ে হয়েচে, কি সুন্দর টুকটুকে মেপ্লেট, কি চমৎকার মুখখনি, বছর দুই বয়েস হবে । আমায় দেখে কেমন ভয় পেলে, কিছুতেই আমার কোলে আসতে চাইলে না। টেপি দিদিকে দেখলুম আজ সকালে বছর পনেরো পরে। একেবারে বুঢ়ী হয়ে গিয়েচে। সেই ফল রং, মৃদর চোখমুখের আর কিছু নেই। মানুষের চেহারা এত বদলেও যায় কালে! যা হোক, যোলো বছর পরে যে ওরা আবার দেশে এসেছে এই একটা বড় আনন্দের বিষয়।