পাতা:ঊর্ম্মিমুখর.djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদিকে যেমন করুণার বাবা, অন্যদিকে তেমনি সহায়হরি ডাক্তার। সহায়হরির মত অর্থপিশাচ মানুষ পাড়াগায়ে বেশী নেই। খতে টাকা উগুল দিয়ে নেয় না, অথচ আদায়ী টাকার জন্তে খাতকের নামে নালিশ করে । চক্রবৃদ্ধি হারের সুদের এক অধিলা রেহাই দেবে না থাতককে । বিকেলে একটু মেঘ করেছিল। গঙ্গাচরণের দোকানে কবিরাজ মশাইয়ের সঙ্গে গন্ন করছিলুম। আমি বল্লুম—কি রাধলেন, কবিরাজ মশাই –কটিকারীর ফল ভাজা আর ভাত। এই কবিরাজট বড় অদ্ভুত মানুষ । বয়স প্রায় ৭০ হবে, কিন্তু সদানন্দ, মুক্তপ্রাণ লোক । কোন দেশ থেকে এদেশে এসেচে কেউ জানে না। বিশেষ কিছু হয় না এই অজ পাড়াগায়ে। তবুও আছে, বলে—এদেশের ওপর মায় বসে গিয়েচে । সোদালি ফুল দিয়ে একটা বালিশ তৈরী করেচে সেই মাথায় দিধে. শুয়ে থাকে | একটু পরে ঘন মেঘ করে এল! বেলেডাঙার ওপারে বাশবনের মাথায় ওপরকার আকাশে যে কি সুনীল নিবিড় মেধসজ্জা ! মেঘের কোলে আবার একসারি বক উডল। কি রূপ যে হোল, আমি বৃষ্টির ভয়ে পলীচি লয়, কিন্তু সৌন্দৰ্য্য দেখে আর নড়তে পারি লে। কে একটী মেয়ে নদীর এপারে কালো চুলের বাশি খুলে দাড়িয়ে আছে। কি চমৎকার ছবিটা! আজ বেশ মনের আনন্দ নিয়েই সকাল সকাল বেলেডাঙ্গ গিয়েছিলুম। তখনও চারটার গাড়ী যায় নি । গঙ্গাচরণের দোকান খোলে আইনদ্দির বাড়ীতে তেল-পড়া নেবার জন্য বুধোকে । আইনদির বাড়ীতে ছেলেবেলাতে একবার গিয়েছি মুম, ওর ছেলে আহাদ মণ্ডল তখন বেঁচেছিল। আইনদির বাড়ীটা কি চমৎকার স্থানে ! সেখান থেকে দুরের মেঘভর আকাশের নীচে প্রাচীন বট অশ্বশ্বের সারি কি অদ্ভূত দেখাচ্ছিল! আইনদি চকুমকি ঠুকে সোলা ধরিয়ে তামাক সাজলে ও একটা সোল ফুটো করে আমায় তামাক খেতে দিলে। তারপর সে কওঁ গল্প করলে বসে বসে । ১২৯২ সালে সে প্রথম এদেশে এসে বাস করে। তখন তার বয়েস বিল্লিশ বছর। সেবছর বার জল উঠেছিল তার উঠানে।