পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
এপিক্‌টেটসের উপদেশ।

তিনি বিচলিত হয়েন না পরন্তু বুদ্ধি জ্ঞানের কার্য্য আরম্ভ না হইতে হইতেই, এক প্রকার অচিন্তিত দ্রুত-উৎপন্ন স্বাভাবিক চাঞ্চল্য আসিয়া তাঁহাকে বিচলিত করে। কিন্তু একটু পরেই যখন বিবেচনা করিয়া দেখেন, তখন ঐ প্রতীয়মান পদার্থ-সকল তাঁহার অন্তরাত্মার বাস্তবিক ভয়ের বিষয় বলিয়া মনে হয় না, তৎসম্বন্ধীয় প্রতীতিতে তিনি সায় দেন না, অথবা অনুমোদন করেন না, তিনি উহা অগ্রাহ্য করেন, পরিত্যাগ করেন, তাহাতে এমন কিছুই দেখেন না যাহাতে তাঁহার ভয় হইতে পারে। তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন, জ্ঞানী ও অজ্ঞানের মধ্যে এইটুকুই প্রভেদ। অজ্ঞানেরা মনে করে, পদার্থ-সমূহের প্রথম প্রতীতিতে উহাদিগকে যেরূপ ভীষণ ও কঠোর বলিয়া মনে হয়, উহারা আসলেও তাই। উহাদের বুদ্ধিও এই প্রতীতিতে সায় দেয়, অনুমোদন করে। কিন্তু যদিও তত্ত্বজ্ঞানীর মুখ কিছুকালের জন্য বিবর্ণ হইয়া যায়, কিন্তু তিনি ইহাতে সায় দেন না, অনুমোদন করেন না। এই প্রতীতি সম্বন্ধে তাঁহার মতের কোন পরিবর্ত্তন হয় না। অর্থাৎ পূর্ব্বের ন্যায় এখনও তিনি মনে করেন,—উহার মধ্যে বাস্তবিক কোন ভয়ের কারণ নাই, উহারা ভীষণ আকার ধারণ করিয়া ফাঁকা ভয় প্রদর্শন করিতেছে মাত্র।

 ২। আমাদের আত্মা একটি জলপূর্ণ পাত্রের মত। পাত্রস্থ জলের উপর যেরূপ আলোক-কিরণ পতিত হয়, সেইরূপ পদার্থ-সমূহ-জাত প্রতীতিও আত্মার উপর প্রতিভাত হয়। জল চঞ্চল হইলে, কিরণও যেরূপ চঞ্চল বলিয়া মনে হয়, কিন্তু আসলে চঞ্চল নহে, সেইরূপ মানুযের মন যখন তমসাবৃত হয়, ঘূর্ণমান হয়, তখনই বিকৃত রূপ-সকল উপলব্ধি হয়, আসল সত্যের কোন বিকার হয় না; যে মনের উপর উহা প্রকটিত হয়, সেই মনেরই বিকৃত অবস্থা প্রযুক্ত উহা বিকৃত ভাবে