পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোন পথে সুখ?
৩৭

কিন্তু আবার যেই তাকে কিছু মিঠাই দেওয়া হয় অমনি সে তাহার দুঃখ ভুলিয়া যায়। তুমি কি সেই শিশুর মতন হইতে ইচ্ছা কর?

 আমি যেন একটু মিষ্টান্নে ভুলিয়া না যাই, আমি যেন যথার্থ-জ্ঞানের দ্বারা—বিশুদ্ধ ভাবের দ্বারা পরিচালিত হই। সেই যথার্থ জ্ঞানটি কি?

 মানুষের এইটুকু বুঝা উচিত—কি বন্ধু বান্ধব, কি পদমর্য্যাদা, এ সমস্ত কিছুই আপনার নহে—সমস্তই পর; নিজের দেহকেও পর বলিয়া বিবেচনা করিবে। ধর্ম্মের নিয়মকেই সর্ব্বদা স্মরণে রাখিবে—চক্ষের সম্মুখে রাখিবে। সে ধর্ম্মের নিয়মটি কি? তাহা এই:—যাহা কিছু বাস্তবিক আপনার—তাহাকেই আঁকড়াইয়া ধরিবে, অন্যের জিনিসে দাবি রাখিবে না। যাহা তোমাকে দেওয়া হইয়াছে তাহাই ব্যবহার করিবে;[১] যাহা তোমাকে দেওয়া হয় নাই তাহাতে লোভ করিবে না; যাহা তোমার নিকট হইতে ফিরিয়া লওয়া হইবে, তাহা তুমি ইচ্ছাপূর্ব্বক সহজে ছাড়িয়া দিবে; যে কয়েক দিনের জন্য ভোগ করিতে পাইয়াছ, তজ্জন্য় প্রদাতাকে ধন্যবাদ করিবে।

 হতভাগ্য মনুষ্য! যাহা প্রতিদিন দেখিতেছ তাহাতে কি তুমি সন্তুষ্ট নহ? এই সূর্য্য, এই চন্দ্র, এই সমুদ্র, এই পৃথিবী,—ইহাদের অপেক্ষা মহৎ অথবা বৃহৎ দ্রষ্টব্য পদার্থ আর কি আছে? যিনি সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডকে শাসন করিতেছেন, তিনি তোমার হৃদয়েও আছেন; তাঁহার পথের যদি তুমি পথিক হও, তাহা হইলে ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমার কি আর আস্থা থাকে? আবার যখন, সেই চন্দ্র সূর্য্যকেও তোমার ছাড়িয়া যাইতে হইবে, তখন তুমি কি করিবে?—শিশুর ন্যায় বসিয়া বসিয়া শুধু কি ক্রন্দন করিবে? তুমি এরূপ কষ্ট পাইতেছ কেন? যথার্থ জ্ঞানের অভাবেই কষ্ট পাইতেছ—মোহ বশতই কষ্ট পাইতেছ।


  1. মাগৃধঃ কস্যস্বিন্ধনং—উপনিষৎ।