পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরহ বিচ্ছেদ।
৫৩

কতকগুলি সচলভাবে অবস্থান করিবে। কিন্তু ইহা জানিবে, সকল পদার্থই দেবতা ও মনুষ্যের প্রেমে পরিপূর্ণ। প্রকৃতির নিয়মে সকলেই পরস্পরের সহিত স্নেহমমতার বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু চিরকাল একত্র থাকাও প্রকৃতির নিয়ম নহে। যত দিন একত্র থাকিতে পার,—আনন্দ কর, কিন্তু কেহ তোমাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেলে পরিতাপ করিও না।

 ৪। হার্কুলিস্ সমস্ত পৃথিবী পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তখন তাঁহার কয়জন বন্ধু ছিল? তিনি তাঁহার পুত্রদিগকে ফেলিয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, কিন্তু তজ্জন্য তিনি বিলাপও করেন নাই—পরিতাপও করেন নাই। তিনি তাহাদিগকে অনাথ করিয়াও যান নাই। কারণ, তিনি জানিতেন, কোন মনুষ্যই অনাথ নহে; একজন পরম পিতা আছেন যিনি অবিরত সকলেরই রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করিতেছেন। হার্কুলিস ঈশ্বরকে সকলের পিতা বলিয়া শুধু জানিতেন না, তিনি তাঁহাকে বিশেষরূপে আপনার পিতা বলিয়া জানিতেন। এই তিনি সকল স্থানেই সুখে কালযাপন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

 ৫। সুখ এবং যাহা তোমার নাই তাহার জন্য আকাঙ্ক্ষা—এই দুই জিনিস একসঙ্গে কখনই থাকিতে পারে না। সুখ, সমস্ত বাসনার চরিতার্থতা চাহে,—পূর্ণ পরিতৃপ্তি চাহে;—তাহার সহিত ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকা চলে না। এমন কোন্ সাধু ব্যক্তি আছে যে আপনাকে জানে না? যে আপনাকে জানে, সে কি একথাও জানে না যে, দুই জন কখনই একত্র চিরকাল থাকিতে পারে না? সে কি জানে না—“যারই জন্ম তারই মৃত্যু”? যাহা পাওয়া অসম্ভব, তাহার জন্য আকাঙ্ক্ষা করা কি বাতুলতা নহে? যে এরূপ আকাঙ্ক্ষা করে সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। সে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে না, সে আপনার ভ্রান্ত প্রতীতি অনুসারেই কাজ করে।