পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরহ বিচ্ছেদ।
৫৭

মরণশীল মর্ত্ত্যজীবকে যে ভাবে ভালবাসা যাইতে পারে, কোন বিদেশযাত্রীকে যেভাবে ভালবাসা যাইতে পারে, সেইরূপ ভাবে ভালবাসোনা কেন—তাহাতে বাধা কি? সক্রেটিস্ কি তাঁহার সন্তানগণকে ভালবাসিতেন না? হাঁ ভালবাসিতেন, কিন্তু তিনি স্বাধীনপুরুষের ন্যায় ভালবাসিতেন; সর্ব্বাগ্রে দেবতাদিগকে ভালবাসিতে হইবে—ইহাই তিনি মনে করিতেন। তাই তিনি জীবনে মরণে—সকল অবস্থাতেই স্বকীয় কর্ত্তব্য সর্ব্বতোভাবে পালন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। নীচ কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়া আমরা নানা প্রকার ওজর করিয়া থাকি। কেহ সন্তানের ওজর—কেহ মাতার ওজর—কেহ বা ভ্রাতার ওজর করিয়া থাকে। কিন্তু এরূপ ওজর করা উচিত নহে। সকলের সঙ্গে থাকিয়া বিশেষতঃ ঈশ্বরের সঙ্গে থাকিয়া আমরা সুখী হই—ইহাই ঈশ্বরের অভিপ্রেত। কাহারও জন্য আমরা অসুখী হই, ইহা তাঁহার অভিপ্রেত নহে।

 ১১। তাছাড়া, যাহা কিছু তোমার প্রিয়—তাহার সম্বন্ধে কি কি প্রতিবন্ধক আছে, একবার কল্পনা করিয়া দেখিবে। যখন তোমার শিশুন্তানটিকে তুমি চুম্বন কর, তখন তাহার কানে কানে এই কথাটি বলিতে হানি কি?—“বাছা! কাল যে তুই চলিয়া যাইবি।” সেইরূপ তোমার বন্ধুর প্রতি এই কথাটি বলিতেই বা দোষ কি?—“হয় তুমি, নয় আমি—দুজনের মধ্যে কেহ কাল প্রস্থান করিব, আর বোধ হয় আমদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ ঘটিবে না।” কিন্তু এ সব যে ‘অলক্ষণে’ কথা।” তুমি কি তবে বলিতে চাহ, যাহা কিছু স্বাভাবিক তাহাই ‘অলক্ষণে?’ তবে বল না কেন—ধান কাটাও “অলক্ষণে”, কেননা তাহাতে ধান মরিয়া যায়। তবে বল না কেন,—পাতা ঝরা, কাচা ডুমুর শুকাইয়া যাওয়া, আঙ্গুর শুকাইয়া কিচ্‌মিচ্ হওয়া—এ সমস্তই ‘অলক্ষণে।’