পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
এপিক্‌টেটসের উপদেশ।

এরূপ বিচলিত হইয়া থাকে। কেন না, যখন সেই অত্যাচারী রাজা কোন ব্যক্তিকে বলে;—“তোমার পায়ে আমি বেড়ী দিব,” সে ব্যক্তির পদ-যুগল যদি তাহার বিশেষ যত্নের জিনিস হয় ত সে বলিবে “দোহাই ধর্ম্মাবতার, আমার উপর দয়া করুন,” কিন্তু আত্মার উপর—আত্মার স্বাধীনতার উপরেই যাহার বেশী আস্থা,—সে বলিবে “ইহাতে যদি তোমার বেশী সুবিধা হয়—তাহাই কর।”

 —“আমাকে কি তবে প্রভু বলিয়া তুমি গ্রাহ্য কর না?”—না, আমি করি না। আমি তোমাকে দেখাইব, আমিই আমার প্রভু! তুমি কিরূপে আমার প্রভু হইবে? ঈশ্বর আমাকে স্বাধীন করিয়া দিয়াছেন। তুমি কি মনে কর ঈশ্বর তাঁহার নিজের সন্তানকে ক্রীতদাস হইতে দিবেন? তুমি আমার মৃত শরীরেরই প্রভু—এই লও সেই শরীর।

 —“তুমি তবে আমার সেবা করিবে না?”

 না, আমি আমার আত্মারই সেবা করিব; আর এই কথা আমার মুখ দিয়া যদি বলাইতে চাও যে আমি তোমারও সেবা করিব,—তাহা হইলে আমি বলিতেছি আমি সেইরূপ ভাবে তোমার সেবা করিব, যেরূপ ভাবে আমি আমার ঘটি বাটীর সেবা করিয়া থাকি।

 ৩। ইহা স্বার্থপরতা নহে। সমস্ত কাজ নিজের জন্যই করিবে এই ভাবেই প্রত্যেক জীব সৃষ্ট হইয়াছে। কিন্তু জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন জীবসমূহ এইরূপ ভাবে গঠিত, যদি তাহারা আত্মহিত করে, সেই সঙ্গে সাধারণের হিত না হইয়া থাকিতে পারে না। অতএব সাধারণের হিতকে বাদ দিয়া কেহ কখন আপনার প্রকৃত হিত করিতে পারে না। ইহা কি কখন প্রত্যাশা করা যায় যে কোন মানুষ আপনা-হইতে আত্মহিত হইতে একেবারেই দূরে থাকিবে? যে মূলতত্ত্বটী সমস্ত প্রকৃতির মধ্যে দেখা যায় সেই আত্মপ্রীতি তাহা হইলে কোথায় থাকে?