পাতা:ঐতিহাসিক উপন্যাস.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সফল স্বপ্ন

সমুদায় আমাদিগকে আনিয়া দে, দিয়া সচ্ছন্দে চলিয়া যা, নিবারণ করিব। না—আমাদিগের এই ব্যবসায়, কেহ কখন জামাদিগের কথার অন্যথা করিতে পারে না”। “তবে তোমরা চৌর্য্যবৃত্তি”? “আমরা চোর হই বা না হই সে কথায় তোর প্রয়োজন কি?”এই প্রয়োজন, যে তোমার সাতজন মাত্র সহায়, কিন্তু যদি সাতশত হয় তথাপি জীবনসত্ত্বে আমি আজ্ঞাবহ হইব না"। তস্কর পথিকের সাহসের কথা শুনিয়া আপন সহযোগিগণকে কহিল, “এ বেটা বলে কি রে?—এ যে মরিতে বসেও কার্দ্দানি ছাড়ে না—ভাল দেখা যাউক, দুই এক ঘা। ওসারিয়া দিলেই ইহার বুদ্ধি স্বস্থান প্রাপ্ত হইবে” এই বলিয়া পথিকের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিল”আইস তোমার পিঠবোচকাটি নামাইয়া দি, ছি ছি কুজের মত পিঠে থাকাতে কি কদাকার দেখাইতেছে, এক বার সোজা হইয়া দাড়াইয়া রূপ খানি দেখাও”। পথিক তষ্করের উপহাসে ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন “রে চোর! আমি প্রাণের ভর করি না, বিশেষত: একাল পর্যন্ত পৃথিবীতে এমত কোন সুখ পাই নাই এবং কখন পাইব এমত আশও করিতেছি না যে, জীবনভয়ে কাতর হইয়া তোর শরণ প্রার্থনা করিব—মৃত্যু আমার পক্ষে প্রার্থনীয়— অতএব সাবধান হইয়া আমার গতি রোধ কর “। এই বলিয়া পথিক এক বৃহৎ বনতরুকে আশ্রয় করিয়া নিষ্কোষ কৃপাণ হস্তে দণ্ডায়মান হইলেন এবং প্রাণপণে যুদ্ধ করিবার প্রতিজ্ঞা করিলেন। চোরেরা ঈদৃশ সাহস এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দর্শনে চমৎকৃত হইল। পরে এক জন দুরাত্মা দূর হইতে সন্ধান করিয়া পথিকের অপসব্য হস্তে শর নিক্ষেপ করিল। পথিক তৎক্ষণাৎ শরকে উৎপাটন করিয়া ফেলিলেন কিন্তু শরধারে বাহুর শিরা ছিন্ন হইয়াছিল, অতএব যুদ্ধ করিবেন কি, ভুজোত্তোলন করিতেও সমর্থ হইলেন না। চোরেরা তৎক্ষণাৎ তাহাকে আক্রমণ করিয়া নিরস্ত্র করিল, এবং তাহার পৃষ্ঠস্থিত থলিয়া মোচন করিয়া ফেলিল।

 লুব্ধেরা পথিকের সমুদয় সম্ভার বাহির করিয়া দেখে তাহাতে এমন কিছুই নাই যে, গ্রহণ করিয়া চরিতার্থ হয়। কিন্তু পথিক সেই সকল দ্রব্য সামগ্রীর জন্যি প্রাণ পর্য্যন্ত পণ করিয়াছিলেন, ইহা ভাবিয়া কেহ পরিহাস করিতে লাগিল, এবং কেহ অদ্ভুত ব্যাপার মানিয়া তুষ্ণীম্ভূত হইয়া রহিল।