আনিয়া ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত ও ঘর্ম্মাক্ত হইয়া উঠিতেছেন, তখন তাঁহার ক্ষুদ্র ছাত্রীটি তাহার ছিন্নপ্রায় চারুপাঠ ও মসীবিচিত্র লিখিবার খাতা, বাগান হইতে কখন ফুল কখন ফল, মাতৃভাণ্ডার হইতে কোন দিন আচার, কোন দিন নারিকেলের মিষ্টান্ন, কোন দিন পাতায় মোড়া কেতকীকেশর-সুগন্ধি গৃহনির্ম্মিত খয়ের আনিয়া নিয়মিত সময়ে তাঁহার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইত।
প্রথম দিনকতক দেখিল শশিভূষণ একখানা চিত্রহীন প্রকাণ্ড কঠোরমূর্ত্তি গ্রন্থ খুলিয়া অন্যমনস্ক ভাবে পাতা উল্টাইতেছেন, সেটা যে মনোযোগ দিয়া পাঠ করিতেছেন তাহাও বোধ হইল না। অন্য সময়ে শশিভূষণ যে সকল গ্রন্থ পড়িতেন, তাহার মধ্য হইতে কোন না কোন অংশ গিরিবালাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ঐ স্থূলকায় কালো মলাটের পুস্তক হইতে গিরিবালাকে শুনাইবার যোগ্য কি দুটো কথাও ছিল না? তা না থাক্, তাই বলিয়া ঐ বই খানা কি এতই বড়, আর গিরিবালা কি এতই ছোট?
প্রথমটা, গুরুর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গিরিবালা সুর করিয়া বানান করিয়া বেণীসমেত দেহের উত্তরার্দ্ধ সবেগে জুলাইতে জুলাইতে উচ্চৈঃস্বরে আপনিই পড়া আরম্ভ করিয়া দিল। দেখিল তাহাতে বিশেষ ফল হইল না। কালো মোটা বইখানার উপর মনে মনে অত্যন্ত চটিয়া গেল। ওটাকে একটা কুৎসিত কঠোর নিষ্ঠুর মানুষের মত করিয়া দেখিতে