আছে। কিন্তু একটা কোন দিকে ত চলিতে হইবে—না হয় এমনি করিয়া ভ্রম দিয়াই এই নূতন জীবনের ভূমিকা আরম্ভ হউক।
সে দিনও মেঘ এবং রৌদ্র আকাশময় পরস্পরকে শিকার করিয়া ফিরিতেছিল। পথের প্রান্তবর্ত্তী বর্ষার জলপ্লাবিত গাঢ়শ্যাম শস্যক্ষেত্র চঞ্চল ছায়ালোকে বিচিত্র হইয়া উঠিতেছিল। হাটের কাছে একটা বৃহৎ রথ পড়িয়াছিল এবং তাহার অদূরবর্ত্তী মুদির দোকানে একদল বৈষ্ণব ভিক্ষুক গুপিযন্ত্র ও খোলকরতাল যোগে গান গাহিতেছিল—
এস এস ফিরে এস—নাথ হে ফিরে এস!
আমার ক্ষুধিত তৃষিত তাপিত চিত, বঁধুহে ফিরে এস!
গাড়ি অগ্রসর হইয়া চলিল, গানের পদ ক্রমে দূর হইতে দূরতর হইয়া কানে প্রবেশ করিতে লাগিল—
ওগো নিষ্ঠুর ফিরে এস হে আমার করুণ কোমল এস!
ও গো সজল জলদ স্নিগ্ধকান্ত সুন্দর ফিরে এস!
গানের কথা ক্রমে ক্ষীণতর অস্ফুটতর হইয়া আসিল, আর বুঝা গেল না। কিন্তু গানের ছন্দে শশিভূষণের হৃদয়ে একটা আন্দোলন তুলিয়া দিল, তিনি আপন মনে গুন্গুন্ করিয়া পদের পর পদ রচনা করিয়া যোজনা করিয়া চলিলেন, কিছুতে যেন থামিতে পারিলেন না,—
আমার নিতিমুখ ফিরে এস, আমার চিরদুখ ফিরে এস,
আমার সব সুখ-দুখ মন্থন ধন অন্তরে ফিরে এস!