বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২৮
কথা-চতুষ্টয়।

 টেবিলের উপরেও কি কতকগুলি ছিল। শশিভূষণ তাঁহার ক্ষীণদৃষ্টি লইয়া ঝুঁকিয়া পড়িয়া দেখিলেন, একখানি বিদীর্ণ স্লেট, তাহার উপরে গুটিদুয়েক পুরাতন খাতা, একখানি ছিন্নপ্রায় ধারাপাত কথামালা এবং একখানি কাশিরাম দাসের মহাভারত।

 স্লেটের কাঠের ফ্রেমের উপর শশিভূষণের হস্তাক্ষরে কালী দিয়া খুব মোটা করিয়া লেখা—গিরিবালা দেবী। খাতা ও বহিগুলির উপরেও ঐ এক হস্তাক্ষরে এক নাম লিখিত।

 শশিভূষণ কোথায় আসিয়াছেন বুঝিতে পারিলেন। তাঁহার বক্ষের মধ্যে রক্তস্রোত তরঙ্গিত হইয়া উঠিল। মুক্ত বাতায়ন দিয়া বাহিরে চাহিলেন—সেখানে কি চক্ষে পড়িল? সেই ক্ষুদ্র গরাদে দেওয়া ঘর, সেই অসমতল গ্রাম্যপথ— সেই ডুরে-কাপড়পরা ছোট মেয়েটি—এবং সেই আপনার শান্তিময় নিশ্চিন্ত নিভৃত জীবনযাত্রা।

 সেদিনকার সেই সুখের জীবন কিছুই অসামান্য বা অত্যধিক নহে; দিনের পর দিন ক্ষুদ্র কাজে ক্ষুদ্র মুখে অজ্ঞাতসারে কাটিয়া যাইত, এবং তাঁহার নিজের অধ্যয়ন-কার্য্যের মধ্যে একটি বালিকা ছাত্রীর অধ্যাপন-কার্য্য তুচ্ছ ঘটনার মধ্যেই গণ্য ছিল; কিন্তু গ্রামপ্রান্তের সেই নির্জ্জন দিনযাপন, সেই ক্ষুদ্র শাস্তি, সেই ক্ষুদ্র মুখ, সেই ক্ষুদ্র বালিকার ক্ষুদ্র মুখখানি, সমস্তই যেন স্বর্গের মত দেশ কালের বহির্ভূত এবং আয়ত্তের অতীতরূপে কেবল আকাঙ্ক্ষারাজ্যের কল্পনাচ্ছায়ার