বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মধ্যবর্ত্তিনী।
১৩

হৃদয়ভার লইয়া তাহার নূতন বৈধব্যশয্যার উপরে আসিয়া পড়িল, তখন গলির অপর প্রান্তে একজন সৌখীন যুবা বেহাগ রাগিণীতে মালিনীর গান গাহিতেছিল; আর একজন বাঁয়া তবলায় সঙ্গৎ করিতেছিল এবং শ্রোতৃবন্ধুগণ সমের কাছে হা-হাঃ করিয়া চীৎকার করিয়া উঠিতেছিল।

 তাহার সেই গান সেই নিস্তব্ধ জ্যোৎস্না-রাত্রে পার্শ্বের ঘরে মন্দ শুনাইতেছিল না। তখন বালিকা শৈলবালার ঘুমে চোখ ঢুলিয়া পড়িতেছিল, আর নিবারণ তাহার কানের কাছে মুখ রাখিয়া ধীরে ধীরে ডাকিতেছিল, সই!

 লোকটা ইতিমধ্যে বঙ্কিম বাবুর চন্দ্রশেখর পড়িয়া ফেলিয়াছে এবং দুই একজন আধুনিক কবির কাব্যও শৈলবালাকে পড়িয়া শুনাইয়াছে।

 নিবারণের জীবনের নিম্নস্তরে যে একটি যৌবন-উৎস বরাবর চাপা পড়িয়াছিল, আঘাত পাইয়া হঠাৎ বড় অসময়ে তাহা উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল। কেহই সেজন্য প্রস্তুত ছিল না, এই হেতু অকস্মাৎ তাহার বুদ্ধিশুদ্ধি এবং সংসারের সমস্ত বন্দোবস্ত উল্টাপাল্টা হইয়া গেল। সে বেচারা কোন কালে জানিত না, মানুষের ভিতরে এমন সকল উপদ্রবজনক পদার্থ থাকে, এমন সকল দুর্দ্দাম দুরন্ত শক্তি, যাহা সমস্ত হিসাব কিতাব, শৃঙ্খলা সামঞ্জস্য একেবারে নয়ছয় করিয়া দেয়।

 কেবল নিবারণ নহে, হরসুন্দরীও একটা নূতন বেদনার পরিচয় পাইল। এ কিসের আকাঙ্ক্ষা, এ কিসের দুঃসহ যন্ত্রণা!