বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪
কথা-চতুষ্টয়।

মন এখন যাহা চায়, কখনও ত তাহা চাহেও নাই, কখনও ত তাহা পায়ও নাই। যখন ভদ্রভাবে নিবারণ নিয়মিত আপিসে যাইত, যখন নিদ্রার পূর্ব্বে কিয়ৎকালের জন্য গয়লার হিসাব, দ্রব্যের মহার্ঘতা এবং লৌকিকতার কর্ত্তব্য সম্বন্ধে আলোচনা চলিত, তখন ত এই অন্তর্বিপ্লবের কোন সূত্রপাতমাত্র ছিল না। ভালবাসিত বটে, কিন্তু তাহার ত কোন উজ্জ্বলতা, কোন উত্তাপ ছিল না। সে ভালবাসা অপ্রজ্জ্বলিত ইন্ধনের মত ছিল মাত্র।

 আজ তাহার মনে হইল, জীবনের সফলতা হইতে যেন চিরকাল কে তাহাকে বঞ্চিত করিয়া আসিয়াছে। তাহার হৃদয় যেন চিরদিন উপবাসী হইয়া আছে। তাহার এই নারীজীবন বড় দারিদ্র্যেই কাটিয়াছে। সে কেবল হাটবাজার পানমস্‌লা তরিতরকারীর ঝঞ্জাট লইয়াই সাতাশটা অমূল্য বৎসর দাসীবৃত্তি করিয়া কাটাইল, আর আজ জীবনের মধ্যপথে আসিয়া দেখিল, তাহারই শয়নকক্ষের পার্শ্বে এক গোপন মহামহৈশ্বর্য্য ভাণ্ডারের কুলুপ খুলিয়া একটি ক্ষুদ্র বালিকা একেবারে রাজরাজেশ্বরী হইয়া বসিল। নারী দাসী বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে নারী রাণীও বটে। কিন্তু ভাগাভাগী করিয়া একজন নারী হইল দাসী, আর একজন নারী হইল। রাণী; তাহাতে দাসীর গৌরব গেল, রাণীর সুখ রহিল না।

 কারণ, শৈলবালাও নারী-জীবনের যথার্থ সুখের স্বাদ পাইল না। এত অবিশ্রাম আদর পাইল যে, ভালবাসিবার