খুলিয়া একে একে সমস্ত গহনা বাহির করিল। শৈলবালাকে ডাকিয়া প্রথমে আপনার বিবাহের বেণারসী সাড়িখানি পরাইল, তাহার পর তাহার আপাদমস্তক এক একখানি করিয়া গহনায় ভরিয়া দিল। ভাল করিয়া চুল বাঁধিয়া দিয়া প্রদীপ জ্বালিয়া দেখিল বালিকার মুখখানি বড় সুমিষ্ট, একটি সদ্যঃপক্ক সুগন্ধ ফলের মত নিটোল, রসপূর্ণ। শৈলবালা যখন ঝম্ঝম্ শব্দ করিয়া চলিয়া গেল, সেই শব্দ বহুক্ষণ ধরিয়া হরসুন্দরীর শিরার রক্তের মধ্যে ঝিম্ঝিম্ করিয়া বাজিতে লাগিল। মনে মনে কহিল, আজ আর কি লইয়া তোতে আমাতে তুলনা হইবে? কিন্তু এক সময়ে আমারও ত ঐ বয়স ছিল, আমিও ত অম্নি যৌবনের শেষরেখা পর্য্যন্ত ভরিয়া উঠিয়াছিলাম; তবে আমাকে সে কথা কেহ জানায় নি কেন? কখন্ সে দিন আসিল এবং কখন্ সে দিন গেল তাহা একবার সংবাদও পাইলাম না! কিন্তু কি গর্ব্বে, কি গৌরবে, কি তরঙ্গ তুলিয়াই শৈলবালা চলিয়াছে।
হরসুন্দরী যখন কেবলমাত্র ঘরকন্নাই জানিত তখন এই গহনাগুলি তাহার কাছে কত দামী ছিল! তখন কি নির্ব্বোধের মত এ সমস্ত এমন করিয়া এক মুহূর্ত্তে হাতছাড়া করিতে পারিত? এখন ঘরকন্না ছাড়া আর একটা বড় কিসের পরিচয় পাইয়াছে, এখন গহনার দাম, ভবিষ্যতের হিসাব সমস্ত তুচ্ছ হইয়া গিয়াছে।
আর শৈলবালা সোণামাণিক ঝকমক্ করিয়া শয়নগৃহে