বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৮
কথা-চতুষ্টয়।

কাছাকাছি ক্ষান্ত দিয়া অত্যন্ত গুম্‌ট করিয়া আছে; আর বড় যা রাধা মুখটা মস্ত করিয়া দাওয়ায় বসিয়াছিল—তাহার দেড় বৎসরের ছোট ছেলেটি কাঁদিতেছিল, দুই ভাই যখন প্রবেশ করিল, দেখিল উলঙ্গ শিশু প্রাঙ্গণের এক পার্শ্বে চীৎ হইয়া পড়িয়া ঘুমাইয়া আছে।

 ক্ষুধিত দুখিরাম আর কালবিলম্ব না করিয়া বলিল “ভাত দে।”

 বড় বৌ বারুদের বস্তায় স্ফুলিঙ্গপাতের মত একমুহূর্ত্তেই তীব্র কণ্ঠস্বর আকাশ পরিমাণ করিয়া বলিয়া উঠিল, “ভাত কোথায় যে ভাত দিব? তুই কি চাল দিয়া গিয়াছিলি? আমি কি নিজে রোজগার করিয়া আনিব?”

 সারাদিনের শ্রান্তি ও লাঞ্ছনার পর অন্নহীন নিরানন্দ অন্ধকার ঘরে প্রজ্জ্বলিত ক্ষুধানলে গৃহিণীর রূক্ষবচন, বিশেষতঃ শেষ কথাটার গোপন কুৎসিত শ্লেষ দুখিরামের হঠাৎ কেমন একেবারেই অসহ্য হইয়া উঠিল।

 ক্রুদ্ধ ব্যাঘ্রের ন্যায় রুদ্ধ গম্ভীর গর্জ্জনে বলিয়া উঠিল “কি বল্লি!” বলিয়া, মুহূর্ত্তের মধ্যে দা লইয়া কিছু না ভাবিয়া একেবারে স্ত্রীর মাথায় বসাইয়া দিল। রাধা তাহার ছোট যায়ের কোলের কাছে পড়িয়া গেল এবং মৃত্যু হইতে মুহূর্ত্ত বিলম্ব হইল না।

 চন্দরা রক্তসিক্ত বস্ত্রে “কি হল গো” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। ছিদাম তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল। দুখিরাম