বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৪
কথা-চতুষ্টয়।

 মৃন্ময়ী আঁকিয়া বাঁকিয়া হাত ছাড়াইয়া পালাইবার চেষ্টা করিল কিন্তু পারিল না। কোঁকড়া চুলে বেষ্টিত তাহার পরিপুষ্ট সাহাস্য দুষ্ট মুখখানির উপরে শাখান্তরালচ্যুত সূর্য্যকিরণ আসিয়া পড়িল। রৌদ্রোজ্জ্বল নির্ম্মল চঞ্চল নির্ঝরিণীর দিকে অবনত হইয়া কৌতূহলী পথিক যেমন নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাহার তলদেশ দেখিতে থাকে অপূর্ব্ব তেমনি করিয়া গভীর গম্ভীর নেত্রে মৃন্ময়ীর উর্দ্ধোৎক্ষিপ্ত মুখের উপর, তড়িত্তরল দুটি চক্ষুর মধ্যে, চাহিয়া দেখিল এবং অত্যন্ত ধীরে ধীরে মুষ্টি শিথিল করিয়া যেন যথাকর্ত্তব্য অসম্পন্ন রাখিয়া বন্দিনীকে ছাড়িয়া দিল। অপূর্ব্ব যদি রাগ করিয়া মৃন্ময়ীকে ধরিয়া মারিত তাহা হইলে সে কিছুই আশ্চর্য্য হইত না, কিন্তু নির্জ্জন পথের মধ্যে এই অপরূপ নীরব শাস্তির সে কোন অর্থ বুঝিতে পারিল না।

 নৃত্যময়ী প্রকৃতির নূপুরনিক্কণের ন্যায় চঞ্চল হাস্যধ্বনিটি সমস্ত আকাশ ব্যাপিয়া বাজিতে লাগিল। এবং চিন্তানিমগ্ন অপূর্ব্বকৃষ্ণ অত্যন্ত ধীর পদক্ষেপে বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল।


তৃতীয় পরিচ্ছেদ।

অপূর্ব্ব সমস্তদিন নানা ছুতা করিয়া অন্তঃপুরে মার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেল না। বাহিরে নিমন্ত্রণ ছিল খাইয়া আসিল। অপূর্ব্বর মত এমন একজন কৃতবিদ্য গম্ভীর ভাবুক লোক