সংগ্রহকারী হাঁকিয়া চলিয়া যায়; এই সমস্ত চঞ্চল দৃশ্য মনকে লঘুভাবে ব্যাপৃত রাখে এবং যে দিন কাঁচা আম অথবা তপ্সী মাছ ওয়ালা আসে, সে দিন অনেক দরদাম করিয়া কিঞ্চিৎ বিশেষরূপ রন্ধনের আয়োজন হয়। তাহার পর যথাসময়ে তেল মাখিয়া স্নান করিয়া আহারান্তে দড়িতে ঝুলান চাপকানটি পরিয়া, এক ছিলিম তামাক পানের সহিত নিঃশেষপূর্ব্বক আর একটি পান মুখে পূরিয়া, আপিসে যাত্রা করে। আপিস হইতে ফিরিয়া আসিয়া সন্ধ্যাবেলাটা প্রতিবেশী রামলোচন ঘোষের বাড়িতে প্রশান্ত গম্ভীরভাবে সন্ধ্যাযাপন করিয়া আহারান্তে রাত্রে শয়নগৃহে স্ত্রী হরসুন্দরীর সহিত সাক্ষাৎ হয়।
সেখানে মিত্রদের ছেলের বিবাহে আইবড়ভাত পাঠান, নবনিযুক্ত ঝির অবাধ্যতা, ছেঁঁচকিবিশেষে ফোড়নবিশেষের উপযোগিতা সম্বন্ধে যে সমস্ত সংক্ষিপ্ত সমালোচনা চলে, তাহা এ পর্য্যন্ত কোন কবি ছন্দোবদ্ধ করেন নাই এবং সে জন্য নিবারণের মনে কখনও ক্ষোভের উদয় হয় নাই।
ইতিমধ্যে ফাল্গুনমাসে হরসুন্দরীর সঙ্কট পীড়া উপস্থিত হইল। জ্বর আর কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না। ডাক্তার যতই কুইনাইন্ দেয়, বাধাপ্রাপ্ত প্রবল স্রোতের ন্যায় জ্বরও তত উর্দ্ধে চড়িতে থাকে। এমন বিশ দিন, বাইশ দিন, চল্লিশ দিন পর্য্যন্ত ব্যাধি চলিল।
নিবারণের আপিস্ বন্ধ; রামলোচনের বৈকালিক সভায় বহুকাল আর সে যায় না; কি যে করে তাহার ঠিক নাই।