বনমালী তাহাদের গ্রামের মাঝি; সে এই উচ্ছৃঙ্খল-প্রকৃতি বালিকাটিকে বিলক্ষণ চিনিত, সে কহিল “বাবার কাছে যাবে? সেত বেশ কথা! চল আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্চি।” মৃন্ময়ী নৌকায় উঠিল।
মাঝি নৌকা ছাড়িয়া দিল। মেঘ করিয়া মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। ভাদ্রমাসের পূর্ণ নদী ফুলিয়া ফুলিয়া নৌকা দোলাইতে লাগিল, মৃন্ময়ীর সমস্ত শরীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হইয়া আসিল; অঞ্চল পাতিয়া সে নৌকার মধ্যে শয়ন করিল, এবং এই দুরন্ত বালিকা নদী-দোলায় প্রকৃতির স্নেহপালিত শান্ত শিশুটির মত অকাতরে ঘুমাইতে লাগিল।
জাগিয়া উঠিয়া দেখিল, সে তাহার শ্বশুরবাড়িতে খাটে শুইয়া আছে। তাহাকে জাগ্রত দেখিয়া ঝি বকিতে আরম্ভ করিল। ঝির কণ্ঠস্বরে শাশুড়ি আসিয়া অত্যন্ত কঠিন কঠিন করিয়া বলিতে লাগিলেন। মৃন্ময়ী বিস্ফারিত নেত্রে নীরবে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। অবশেষে তিনি যখন তাহার বাপের শিক্ষাদোষেব উপর কটাক্ষ করিয়া বলিলেন, তখন মৃন্ময়ী দ্রুতপদে পাশের ঘরে প্রবেশ করিয়া ভিতর হইতে শিকল বন্ধ করিয়া দিল।
অপূর্ব্ব লজ্জার মাথা খাইয়া মাকে আসিয়া বলিল, “মা বৌকে দুই একদিনের জন্যে একবার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে দোষ কি?”
মা অপূর্ব্বকে ন ভূত ন ভবিষ্যতি ভৎসনা করিতে লাগি