পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মধ্যবর্ত্তিনী।

একবার শয়ন-গৃহে গিয়া রোগীর অবস্থা জানিয়া আসে, একবার বাহিরের বারান্দায় বসিয়া চিন্তিত মুখে তামাক টানিতে থাকে। দুই বেলা ডাক্তার বৈদ্য পরিবর্ত্তন করে এবং যে যাহা বলে সেই ঔষধ পরীক্ষা করিয়া দেখিতে চাহে।

 ভালবাসার এইরূপ অব্যবস্থিত শুশ্রূষা সত্ত্বেও চল্লিশ দিনে হরমুন্দরী ব্যাধিমুক্ত হইল। কিন্তু এমনি দুর্ব্বল এবং শীর্ণ হইয়া গেল যে, শরীরটি যেন বহুদূর হইতে অতি ক্ষীণস্বরে “আছি” বলিয়া সাড়া দিতেছে মাত্র।

 তখন বসন্তকালে দক্ষিণের হাওয়া দিতে আরম্ভ করিয়াছে এবং উষ্ণ নিশীথের চন্দ্রালোকও সীমন্তিনীদের উন্মুক্ত শয়নকক্ষে নিঃশব্দপদসঞ্চারে প্রবেশাধিকার লাভ করিয়াছে।

 হরসুন্দরীর ঘরের নীচেই প্রতিবেশীদের খিড়কীর বাগান। সেটা যে বিশেষ কিছু সুদৃশ্য রমণীয় স্থান তাহা বলিতে পারি না। এক সময় কে একজন সক করিয়া গোটাকতক ক্রোটোন রোপণ করিয়াছিল, তার পরে আর সে দিকে বড় একটা দৃক্‌পাত করে নাই। শুষ্ক ডালের মাচার উপর কুষ্মাণ্ডলতা উঠিয়াছে; বৃদ্ধ কুলগাছের তলায় বিষম জঙ্গল; রান্নাঘরের পাশে প্রাচীর ভাঙ্গিয়া কতকগুলো ইঁট জড় হইয়া আছে এবং তাহারই সহিত দগ্ধাবশিষ্ট পাথুরে কয়লা এবং ছাই দিন দিন রাশীকৃত হইয়া উঠিতেছে।

 কিন্তু বাতায়নতলে শয়ন করিয়া এই বাগানের দিকে চাহিয়া হরসুন্দরী প্রতিমুহূর্ত্তে যে একটি আনন্দরস পান