বেলায় নদীতীর একেবারে নির্জ্জন হইয়া যায়, তখন কি অবাধ স্বাধীনতা! এবং তিন জনে মিলিয়া নানা প্রকার যোগাড় করিয়া, ভুল করিয়া, এক করিতে আরেক করিয়া তুলিয়া রাঁধা-বাড়া। তাহার পরে মৃন্ময়ীর বলয়ঝঙ্কৃত স্নেহহস্তের পরিবেশনে শ্বশুর জামাতার একত্রে আহার, এবং গৃহিণীপনার সহস্র ক্রটি প্রদর্শনপূর্ব্বক মৃন্ময়ীকে পরিহাস ও তাহা লইয়া বালিকার আনন্দকলহ এবং মৌখিক অভিমান।
অবশেষে অপূর্ব্ব জানাইল আর অধিক দিন থাকা উচিত হয় না। মৃন্ময়ী করুণস্বরে আরও কিছু দিন সময় প্রার্থনা করিল। ঈশান কহিল কাজ নাই।
বিদায়ের দিন কন্যাকে বুকের কাছে টানিয়া তাহার মাথায় হাত রাখিয়া অশ্রুগদগদকণ্ঠে ঈশান কহিল, “মা, তুমি শ্বশুরঘর উজ্জ্বল করিয়া লক্ষ্মী হইয়া থাকিয়ো। কেহ যেন আমার মীনুর কোন দোষ না ধরিতে পারে!”
মৃন্ময়ী কাঁদিতে কাঁদিতে স্বামীর সহিত বিদায় হইল। এবং ঈশান সেই দ্বিগুণ নিরানন্দ সঙ্কীর্ণ ঘরের মধ্যে ফিরিয়া গিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস নিয়মিত মাল ওজন করিতে লাগিল।