বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৬
কথা-চতুষ্টয়।

সম্মুখে তক্তপোষের উপরে রাশীকৃত ছিল; এবং বালিকা যখন ক্ষণে ক্ষণে অবনত হইয়া কোন একটা অনির্দ্দেশ্য কাল্পনিক পদার্থের অনুসন্ধানে নিযুক্ত ছিল তখন যুবক মনের হাস্য গোপন করিয়া অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে একটি একটি জাম নির্ব্বাচন করিয়া সযত্নে আহার করিতে ছিল। অবশেষে যখন দুটো একটা আঁটি দৈবক্রমে বালিকার পায়ের কাছে, এমন কি, গায়ের উপরে আসিয়া পড়িল তখন গিরিবাল বুঝিতে পারিল যুবক বালিকার অভিমানের প্রতিশোধ লইতেছে। কিন্তু এই কি উচিত! যখন সে আপনার ক্ষুদ্র হৃদয়টুকুর সমস্ত গর্ব্ব বিসর্জ্জন দিয়া আত্মসমর্পণ করিবার অবসর খুঁঁজিতেছে তখন কি তাহার সেই অত্যন্ত দুরূহ পথে বাধা দেওয়া নিষ্ঠুরতা নহে? ধরা দিতে আসিয়াছে এই কথাটা ধরা পড়িয়া বালিকা যখন ক্রমশঃ আরক্তিম হইয়া পলায়নের পথ অনুসন্ধান করিতে লাগিল তখন যুবক বাহিরে আসিয়া তাহার হাত ধরিল।

 সকালবেলাকার মত এবেলাও বালিকা আঁকিয়া বাঁকিয়া হাত ছাড়াইয়া পালাইবার বহু চেষ্টা করিল—কিন্তু কাঁদিল না। বরঞ্চ রক্তবর্ণ হইয়া ঘাড় বাঁকাইয়া উৎপীড়নকারীর পৃষ্ঠদেশে মুখ লুকাইয়া প্রচুর পরিমাণে হাসিতে লাগিল এবং যেন কেবলমাত্র বাহ্য আকর্ষণে নীত হইয়া পরাভূত বন্দীভাবে লৌহগরাদে বেষ্টিত কারাগারের মধ্যে প্রবেশ করিল।

 আকাশে মেঘ রৌদ্রের খেলা যেমন সামান্য, ধরাপ্রান্তে